পটুয়াখালী-৪ আসনে নৌকার বিদ্রোহী সাবেক মন্ত্রী ও তার ভাই

পটুয়াখালী-৪ আসনে নৌকার বিদ্রোহী সাবেক মন্ত্রী ও তার ভাই

সিকদার জোবায়ের হোসেন, পটুয়াখালী 

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসনে  মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আপন দুই ভাই। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার এবং তারই আপন ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো.জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তারা।

এর আগে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা দুজনেই ।

কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা  বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমানকে। এরপরই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার  ঘোষণা দেন মাহবুব ও হাবিব ।

নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। এ নিয়ে পটুয়াখালী-৪ আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।

বাণিজ্যকেন্দ্র বিবেচনায় পটুয়াখালী-৪ আসন এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাঙ্গাবালী কলাপাড়া ও মহিপুর থানা নিয়ে এ আসন গঠিত। এ এলাকায় রয়েছে-পর্যটনকেন্দ্র সাগর কন্যা কুয়াকাটাও পায়রা সমুদ্রবন্দর। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গড়ে ওঠা আরও নানা শিল্প প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ হতে থাকা এলাকাটি ক্রমেই হয়ে উঠছে দক্ষিণের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। এ কারণে সবার নজর এখন এ এলাকার দিকে। আর এখানে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীতার বিরোধে জড়িয়েছেন তিনবারের সাবেক এমপি মাহবুব এবং তার ভাই সাবেক আমলা মিলন। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে মাহবুব ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। মাত্র কয়েক বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া মাহবুবকে নিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ  গণমাধ্যম গুলো ধারাবাহিক সংবাদ ছাপে। তার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করে। মাহাবুবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকায় গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন হারায় প্রতিমন্ত্রী মাহাবুব।

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার জানান, এলাকার মানুষের রিকয়েষ্টে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী  হয়েছি। আশাকরি আমি ভোটে জয়লাভ করতে পারবো।  

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান বলেন, আমার বড় ভাই মাহবুবুর রহমান তালুকদার কিছু লোকের প্ররোচনায় প্রার্থী হয়েছেন। আমি মনে করি এটা তার ভুল সিদ্ধান্ত। সে তিন বার এমপি ছিলো, আমি তাকে সাপোর্ট দিয়েছি বিভিন্নভাবে। আমার সাপোর্ট না পেলে তিনি এত দূর এগুতে পারতো না। এবার আমি আশা করছিলাম যেহেতু তার শারিরীক কন্ডিশন ভালো না, তাই সে আমাকে সাপোর্ট দিবেন। কিন্তু তিনি কিছু সুবিধাবাদী লোকের প্ররোচনায় প্রার্থী হয়েছেন। একটা শ্রেণীর লোক আছে, যারা মাহবুবুর রহমান তালুকদার এমপি থাকা অবস্থায় লুটপাট করে খেতে পারছে, এইসব লোকেরাই এবারও তাকে প্রার্থী করেছেন, যাতে আবারও লুটপাট করে টাকা পয়সা কামাতে পারে । তবে আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব, এক পা পিছু হটবো না। '

তবে দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এলাকা জুড়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোনা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দুই ভাইয়ের কাড়াকাড়িতে ভোট নষ্ট হতে পারে আওয়ামী লীগের। সুবিধা নিতে পারে জাতীয় পার্টি কিংবা জাসদ।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের মঙ্গল জনক নয়। যেখানে জাতীয় পার্টি এবং জাসদ নির্বাচন করছে সেখানে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী দলের জন্য বিপদজনক। যেটি আমারা কোনভাবেই মানতে পারিনা।  

কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আশিক তালুকদার বলেন, বহুল আলোচিত দুর্নীতিবাজ মাহবুবুর রহমান তালুকদার বিচারাধীন তিনটি দুর্নীতি মামলার আসামি, ৫২ বছরের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে লুটপাটের উদ্দেশ্যে দলের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ বলেন, বর্তমান এমপি ৫ বছর প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনার পক্ষে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন । তার নামে কোন দুর্নাম নেই । আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ভোটে তিনি আবারো এমপি নির্বাচিত হবেন।

রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, বিদ্রোহীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেই । যারা আছে তারা আসলে আওয়ামী লীগের কেউ নন। আমরা দলীয় ভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছি। নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রতীকের পক্ষে কাজ করবে না কেউ। যে ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু আদর্শের আওয়ামী লীগ করে সে কোনদিন নৌকার বিপক্ষে যেতে পারে না।

পটুয়াখালীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন ১১৪ পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা) আসন। এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ০৭ জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই ০৩ জন। মাহবুব-হাবিব দুই ভাই ছাড়াও অপর বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন।  

অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান। রয়েছে জাতীয় পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থীও।

এই রকম আরও টপিক