২০০৮-২০২৩ : হুইপ সামশুল ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদের পাহাড়

সংগৃহীত ছবি

২০০৮-২০২৩ : হুইপ সামশুল ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী গত ১৫ বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) তাঁর দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য মিলেছে।  

সামশুল হক বর্তমানে আওয়ামী লীগের এমপি হলেও এবার তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি দল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত ৩০ নভেম্বর ইসিতে হলফনামা জমা দেন সামশুল হক। এতে দেখা যায়, ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামার চেয়ে সামশুল হক ও তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪১ গুণ। একইসঙ্গে নিজের আয় বেড়েছে প্রায় ২১ গুণ। ২০০৮ সালে প্রাইভেটকার ব্যবহার করলেও বর্তমানে সামশুল হক প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজারে যাতায়াত করেন।

অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৪১ গুণ
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সামশুল হক চৌধুরী অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন ২১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৯ টাকার। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ৫ কোটি ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৫৯০ টাকার। এ ছাড়া ১০ হাজার ৩২ দশমিক ৭ ইউএস ডলার আছে বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন তিনি। এবার তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ ১৭ হাজার ১৭২ টাকার।

২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় স্ত্রীর কোনো অস্থাবর সম্পত্তি ছিল না। সেই হিসেবে এই দম্পতির অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪১ গুণ।
সামশুল হক তাঁর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফমনামায় নগদ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৪ টাকা। আর স্ত্রীর নামে নগদ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর নামে ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯ টাকা জমা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। আর স্ত্রীর নামে ব্যাংকে দেখিয়েছেন ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮২ টাকা।

এছাড়া সামশুল হকের বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে ১২ লাখ টাকার শেয়ার, বন্ড ও ঋণপত্র। তাঁর নিজের নামে এফডিআর রয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ও ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। আর স্ত্রীর নামে এফডিআর রয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯১ টাকার, সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার ও ডিপিএস রয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার।

হলফনামায় বলা হয়, সামশুল হকের ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার দামের দুইটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। নিজের নামে ২৫ হাজার টাকার ও স্ত্রীর ১ লাখ টাকার স্বর্ণ রয়েছে। নিজের ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র দেখানো হয়। অন্যান্য খাতে তাঁর নিজ নামে ও ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে ২২ লাখ ১৩ হাজার ৯২৭ টাকার। আর স্ত্রীর নামে ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে ৯ লাখ ৭ হাজার ৬১৩ টাকার।  

অপরদিকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়ের করা হলফনামায় সামশুল হক উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে ১ হাজার ৩৬৯ টাকা। শেয়ার আছে ৪০ হাজার টাকার। ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি টয়োটা গাড়ি রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া ২৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ, ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল বলে ওই সময় হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। তখন স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদের কথা বলা হয়নি।

আয় বেড়েছে ২১ গুণ
২০০৮ সালে হলফনামায় সামশুল হক চৌধুরী আয়ের উৎস হিসেবে বাড়ি, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছিলেন ৪৫ হাজার টাকা। আর ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছিলেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় সামশুল হক বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮০ টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে তাঁর আয় বেড়েছে ২১ গুনের বেশি। এর মধ্যে বাড়ি-দোকান ভাড়া বাবদ বছরে আয় ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৪ টাকা।

তাঁর ব্যবসা থেকে বর্তমান আয় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০৮ টাকা আয় হয়। চাকরি থেকে আয় দেখিয়েছেন ১১ লাখ ৪ হাজার। অন্যান্য ভাতাদি দেখিয়েছেন ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৮ টাকা। এ ছাড়া তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৮ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল না বলে উল্লেখ করেছিলেন।  

বেড়েছে স্থাবর সম্পদও 
এবার দাখিল করা হলফনামায় বলা হয়, সামশুল হকের স্থাবর সম্পত্তিতে কৃষি জমি না থাকলেও রয়েছে ৭৪ লাখ ৭ হাজার ৯২০ টাকা পরিমাণের অকৃষি জমি। তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ২৫০ টাকার মূল্যের অকৃষি জমি। রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার দালান। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের ৮টি টিনশডে গোডাউন, নিজের নামে ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ কাঠা জমিসহ ৪তলা ভবন রয়েছে।  

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমির কথা। ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের দালানের তথ্য দিয়েছিলেন তখন। সেবার স্ত্রীর নামে স্থাবর কোনো সম্পদ নেই বলে হলফনমায় উল্লেখ করা হয়েছিল।

news24bd.tv/FA