রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ঝিনাইদহে বাড়ছে কিশোর অপরাধ

প্রতীকী ছবি

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ঝিনাইদহে বাড়ছে কিশোর অপরাধ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহে সাম্প্রতিক সময়ের সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় কিশোর অপরাধ। যদিও এটি একটি সামাজিক সমস্যা। কিন্তু বর্তমানে অপরাধ সম্রাজ্যে কিশোর অপরাধ ক্রমেই আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে ঝিনাইদহের শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কিশোর অপরাধ।

যার ফলে একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ, খুন, চুরি, ছিনতাইয়ের মত ঘটনা।

অভিযোগ রয়েছে, এসব কিশোর অপরাধীদের পেছন থেকে মদদ দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের কিছু উচ্চাভিলাষী নেতা। যারা তাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। বিশেষ করে সমাজে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এসব কিশোর বা উঠতি বয়সী তরুণকে নানা অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছেন তারা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা আরও বাড়াতে তাদেরকে মদদ দিচ্ছে ওই সকল রাজনৈতিক নেতা।

সচেতন নাগরিক সমাজের ধারণা, স্কুল-কলেজগামী কিশোরদের হাতে দামি মোবাইল ও প্রযুক্তির অপব্যবহারে তারা জড়িয়ে পড়ছে খুন ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধে। তাছাড়া অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে বিপথগামী কিশোররা নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি ছিনতাইয়ের মত জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে।

জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে শৈলকূপার ভাটইবাজার এলাকায় টিকটকের ভিডিও করা নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এরপর সে ঘটনায় বিল্লাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়।

এর আগে গত জুলাইয়ে সদর উপজেলার আড়ুয়াকান্দি এলাকায় মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে কিশোর সাকিবকে গলাকেটে হত্যা করে তাঁরই বন্ধু মনির মোল্লা। গত কয়েক মাসে জেলার বেশ কয়েক জায়গায় কিশোর অপরাধীদের হাতে আহত হয়েছে অনেকে।

এছাড়া ছিনতাই আতঙ্ক বিরাজ করছে ঝিনাইদহ শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। সন্ধ্যার পরপরই এক শ্রেণির উঠতি বয়সী কিশোররা বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে পথচারীদের মোবাইলসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে অবাধে পালিয়ে যাচ্ছে । এ ধরনের একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় যেকোনো সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান, যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

ঝিনাইদহ জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি অমিনুর রহমান টুকু জানান, মিডিয়ায় প্রচারিত বড় বড় শহরের কিশোর গ্যাং এর সংবাদও উৎসাহিত করছে কিশোরদের। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে তাদের সরব উপস্থিতি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ না নিলে সাংস্কৃতিকভাবে ঝিনাইদহের ভবিষ্যতে সামাজিক নৈরাজ্যসহ ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কিশোরদের গ্যাং কালচার বা সংঘবদ্ধ অপরাধের ভয়ঙ্কর চিত্র সামনে এলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কিশোর অপরাধের প্রবণতা কমানো যায়নি, বরং বেড়েছে।

সম্প্রতি টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছে কিশোর-তরুণরা। এক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গ্রুপ। এসব গ্রুপে থাকছে একাধিক মেয়ে সদস্য। তাদের দিয়ে তৈরি হচ্ছে আকর্ষণীয় ভিডিও। সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে না বুঝে এসব গ্রুপে যুক্ত হচ্ছেন উঠতি বয়সী তরুণীরা। অনেক ক্ষেত্রে টিকটকের নায়িকা বানানোর টোপ দিয়ে তাদের দলে ভেড়ানো হচ্ছে। একবার দলে ভেড়ানো গেলে সেখান থেকে বের হওয়ার আর কোনো রাস্তা থাকে না।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান জানান, স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার অভাব, তাদের হাতে দামি মোবাইল আর এসব মোবাইলে প্রযুক্তির অপব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতা কিশোরদের বিভিন্ন অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে অভিভাবকদের অসচেতনতায় কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে, আসক্ত হচ্ছে নেশায়। তারা নেশার টাকা জোগাড় করতে পা বাড়াচ্ছে অপরাধ জগতে। পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক পদক্ষেপ ছাড়া কিশোর অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতামাতা তথা অভিভাবকদের। স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ইমাম-পুরোহিতসহ সকল স্তরের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও জানান,আমরা বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছি। যথাযথ আইন প্রয়োগ করে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক