অবশেষে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা শিশু

অবশেষে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

ইসমত আরা ইসু, কক্সবাজার

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনেক জলঘোলার পর অবশেষে শুরু হতে যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে। অপরদিকে বান্দরবানের ঘুমধুমে আরো একটি ট্রানজিট ক্যাম্প প্রায় সম্পন্নের পথে।

নাগরিকত্ব, বসতভিটা, জমিজমা ফিরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে রাজি রোহিঙ্গারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রোহিঙ্গাদের প্রথম ধাপের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে মিয়ানমার বাহিনী। চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ।

নিপীড়নের মুখে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা। এর পূর্ব থেকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাসহ ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা তাদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, অস্থায়ী বাসস্থানসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বসম্মানে স্বদেশে ফেরৎ পাঠাতে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে সরকার।  

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়। স্মারকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ামারের কাছে ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ওই তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ জনকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয়। গত ৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রথম ধাপে ২ হাজার ২৫১জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের বিষয় চুড়ান্ত করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ফেরত নেওয়া হবে ১৫০ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের প্রথম ধাপের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে। অপরদিকে বান্দরবানের ঘুমধুমে আরো একটি ট্রানজিট ক্যাম্প প্রায় সম্পন্নের পথে।  

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ফলপ্রসু করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে প্রশাসন।

গত অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন থোয়ের কাছে আরো ৫ হাজারের অধিক পরিবারের ২২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। এর পরের দিন ৩১ অক্টোবর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের প্রথমে মংডু শহরে স্থাপিত আইডিপি ক্যাম্পে নেওয়া হবে। এরপর নিজেদের গ্রামে ফেরত যেতে পারবে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানবিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। চলতি নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।

সম্পর্কিত খবর