যে কারণে ভারতের আঞ্চলিক নির্বাচনে জিতলো বিজেপি

সংগৃহীত ছবি

যে কারণে ভারতের আঞ্চলিক নির্বাচনে জিতলো বিজেপি

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের তিনটি প্রধান রাজ্যের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। রোববারে অনুষ্ঠিত এসকল নির্বাচনে বিজেপি রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় রাজ্যে প্রতিপক্ষ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলকে হারিয়েছে এবং মধ্য প্রদেশে টানা পঞ্চমবারের  মতো ক্ষমতায় এসেছে। ভারতের আইনসভায় এই তিনটি রাজ্য থেকে মোট ৬২জন মন্ত্রী প্রতিনিধিত্ব করেন।

আঞ্চলিক নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয় দলটির ক্ষমতায় আসার স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া দলটিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদভিত্তিক রাজনীতি করা বিজেপিকে হারানোর জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

অবশ্য কংগ্রেস দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের নির্বাচনে জয় পেয়েছে। এর ফলে ভারতের উত্তর ও দক্ষিণের রাজনীতির মধ্যকার স্পষ্ট বিভাজনটি ফুটে উঠেছে। এছাড়াও দলটি কর্ণাটক রাজ্যেও ক্ষমতাসীন, যা  দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে বিজেপির দূর্বল অবস্থানের দিকেই ইঙ্গিত করে।

 

আঞ্চলিক নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পেছনে চারটি কারণকে প্রধান বলে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেগুলো হলো:

কল্যাণ স্কিম এবং সেগুলোর প্রচার

প্রথমদিকে বিজেপিকে ব্যবসাবান্ধব এবং শহরবান্ধব একটি দল মনে করা হলেও বর্তমানে দলটি দরিদ্র নাগরিকদের মাঝেও তাদের অবস্থান শক্ত করেছে। ক্যাশ ট্রান্সফার, বিনামূল্যে রেশন এবং স্বল্প খরচে গ্যাস সিলিন্ডার প্রাপ্তির মতো রাষ্ট্রের দরিদ্র নাগরিকদের জন্য চালু করা বেশ কিছু সেবা দলটির ইমেজে পরিবর্তন এনেছে।

মোদী ম্যাজিক

নিজের এক্স (পূর্বে টুইটার) একাউন্টে নয় কোটিরও বেশি অনুসারী মোদীর তুমুল জনপ্রিয়তাকেই প্রমান করে। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ভারতের জয়গুলোকে মোদী সফলভাবে তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কাজে লাগিয়েছেন। মোদীর আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছে এবং মোদী নিজেকে গ্লোবাল সাউথের একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। পাশাপাশি, মোদী ভারতকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে, মোদী সরকারের আমলে বিশ্বে ভারতের গুরুত্ব অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনে।

নির্বাচনী তহবিল এবং প্রচারণার মাত্রা

প্রচুর পরিমানে তহবিল পাওয়ার কারণে বিজেপি নির্বাচনগুলোতে বেশি মাত্রায় প্রচারণা চালাতে পেরেছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পাওয়া তহবিলের প্রায় অর্ধেকই এসেছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে, যেখানে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে পরিমানটা হচ্ছে মাত্র ১০%। এসকল তহবিলকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক নির্বাচনের আগে মোদী রাজস্থানে ১৪টি সমাবেশ ও ২টি রোড শো এবং ছত্তিশগড়ে পাচটি সমাবেশ করেছেন, যা ভোটারদের কাছে বিজেপির অবস্থানকে শক্ত করেছে।

বিরোধী দলগুলোর মাঝে ঐক্যের অভাব

কংগ্রেসের পরাজয়ের পেছনে দলটির অন্যান্য বিরোধী দলের সাথে ঐক্য সৃষ্টির ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও অনেকে কংগ্রেস পার্টিকে নাকউঁচু স্বভাবের দলও বলে থাকেন, যারা সহজে জনগনের সাথে মিশতে পারে না। বিষেশজ্ঞদের মতে, দলটির উচিৎ তরুণদেরকে সামনে নিয়ে আসার মাধ্যমে নতুন করে নিজেদেরকে ঢেলে সাজানো, যারা নতুন প্রজন্মের নাড়ি ধরতে পারবে।

রাহুল গান্ধী, তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং তার মা সোনিয়া গান্ধী- এই তিনজনই বর্তমানে দলটির সবচেয়ে পরিচিত মুখ, যার পরিবর্তন আবশ্যক যদি দলটি নির্বাচনে জিততে চায়।

news24bd.tv/ab