শিশু জোনাকির পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ

শিশু জোনাকির পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ

আব্দুস সালাম বাবু, বগুড়া

বগুড়ায় ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে বাঁচানোর চেষ্টায় শিশু জোনাকির জীবন সংগ্রামে পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ, প্রতিমাসে জোনাকির পড়াশুনার খরচসহ তিন মাসের খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে তাদের হাতে।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় সোনাতলার বালুয়াহাট শিল্পপাড়ায় দরিদ্র পরিবারকে বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে এসব সহায়তা প্রদান করেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর পড়াশুনার দায়িত্ব নেওয়াসহ ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের সুচিকিৎসার আশ্বাসে যেমন হতদরিদ্র পরিবারে স্বস্তি, তেমনি সাধুবাদ জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ সুধীজন।

সরোজমিনে জানা গেছে, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাট ইউনিয়নের শিল্পপাড়ার দিনমজুর জিল্লার রহমান ও স্ত্রী মেনেকা বেগমের সংসারে তিন মেয়ে। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে ইতিপূর্বে। ঘরে তার স্কুল শিক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে তিনজনের সংসার। ভ্যান চালিয়ে কোনোমতে চলছিল তাদের জীবন।

এরই মধ্যে মরনব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন জিল্লার। ২০২১ সালে তিনি মারা যান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবাকে হারানোর পর এবার জোনাকীর একমাত্র ভরসা মা’ও ক্যান্সারে আক্রান্ত। মায়ের চিকিৎসা, সংসার আর পড়াশোনার খরচ ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার জোনাকির কাঁধেই পড়ে যায়। মায়ের চিকিৎসায় এনজিও থেকে নেওয়া ৫০ হাজার টাকার ঋণের কিস্তি আর ওষুধের টাকা জোগাড় করতে ব্যাগ ফ্যাক্টরিতে কাজ নেয় শিশু জোনাকী। পরিবারে আর কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় ১২ বছরের জোনাকির জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। শপিং ব্যাগ তৈরির কারখানায় কাজ করে সপ্তাহে যে ৭০০ টাকা উপার্জন হতো তার মধ্য থেকে ৫০০ টাকা ঋণের কিস্তি আর অবশিষ্ট ২০০ টাকায় মায়ের ওষুধ ও নিজেদের খাওয়া; এভাবেই সংসার চালাতে হচ্ছিল জোনাকিকে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নজরে আসে বসুন্ধরা গ্রুপের। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় হতাশায় নিমজ্জিত হতদরিদ্র পরিবারের পাশে আশার আলো দেখাল মানবিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে তাদের ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি সহায়তা নিয়ে শুক্রবার তাদের বাড়িতে হাজির হন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। এসময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমন মানবিক সহায়তা পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন জোনাকির মা ক্যান্সার আক্রান্ত মেনেকা বেগম (৪২)। তিনি জোনাকিকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে লেখাপড়ার খরচ প্রদানের পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি মা-মেয়ের জন্য আগামী তিন মাসের খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৫০ কেজি চাল, ডাল, চিনি, আটা, তেল, লবন, পেঁয়াজ, আলু ও মসলা সামগ্রী তুলে দেন তাদের হাতে।

এসময় সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লীটন, বালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মণ্ডল, বসুন্ধরা শুভ সংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, দৈনিক সমকালের উত্তরাঞ্চল প্রধান লিমন বাসার, বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুর রহমান টুলু, নিউজ টোয়েন্টিফোর এর প্রতিনিধি আব্দুস সালাম বাবু, দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি জেএম রউফ, শুভ সংঘ বগুড়া জেলা কমিটির উপদেষ্টা মশিউর রহমান জুয়েল, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি আব্দুল আউয়াল, সোনাতলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন মজনু, টিজিএসএস চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম, দুর্জয় সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি ইকবাল কবির লেমন, সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম উজ্জ্বল, আলোর প্রদীপ চেয়ারম্যান এম মেহরুল, বালুয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, সাবেক ইউপি সদস্য সাজু মিয়া, ফ্রি ভলান্টিয়ার্স অব বাংলাদেশ এর সভাপতি শিমন আহম্মেদ বাদল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। সারা দেশে অসহায় মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। জোনাকি ও তার মায়ের পাশে থাকবে। যতোদিন পর্যন্ত জোনাকি লেখাপড়া করতে চায় ততোদিন সে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে পাবে। এছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত মেনেকা বেগমের চিকিৎসার জন্যও সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের অফিস সহকারি মহিদুল ইসলামের হাতে মেনেকার নামে নেওয়া ঋণের সমুদয় টাকা তুলে দিয়ে ব্যাংক থেকে প্রাপ্তিস্বীকার পত্র ও জমা বই মেনেকা বেগম ও জোনাকির হাতে তুলে দেন।

তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু জোনাকি নয়, সারা দেশের এমন অনেক অসহায় মানুষের পাশে আছে। গ্রামীণ অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষাবিস্তারে কাজ করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বসুন্ধরা শুভসংঘের উপহার পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেনেকা বেগম। তিনি বলেন, ‘এমন দিনে তারা পাশে এসে দাঁড়াইছে, আল্লাহ যেন তাদের ভালো করে। ’ জোনাকি নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে বলে ‘বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করি, তাদের ভালো হোক, আল্লাহ তাদেরকে আরো সহায়তা দেয়ার তৌফিক দান করুন। তাদের কিস্তির ট্যাকার টেনশন থাকল না। খাবারগুলো ঘরে থাকায় এখন কাজ করার দরকার হবে না। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারব বলে সে জানান।

বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মণ্ডল, সাবেক ইউপি সদস্য সাজু মিয়া বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের মতো সবাই যদি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতো তবে দারিদ্রতা থাকতো না।

সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লীটন বলেন, মানবিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। বগুড়ার নিভৃত পল্লীতে অসহায় মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধারসহ সকল কর্মকর্তা ও গ্রুপ সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক