কী কী সুবিধা থাকছে স্বাস্থ্য কার্ডে

সংগৃহীত ছবি

কী কী সুবিধা থাকছে স্বাস্থ্য কার্ডে

অনলাইন ডেস্ক

স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল করতে ডিজিটাল স্বাস্থ্য কার্ডের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে কার্ডধারীকে বাড়তি কোনো কাগজপত্র বহন করতে হবে না। কার্ডেই সব তথ্য থাকবে। চিকিৎসকও সেখান থেকে রোগীর আগের তথ্য পাবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রথমে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি হাসপাতালে এই কার্ড ও কার্ডের মাধ্যমে সেবা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এটা বিস্তৃত হবে। পুরো কাজ শেষ হতে পাঁচ-ছয় বছর লেগে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, স্বাস্থ্য কার্ডের জন্য আলাদা ওয়েবসাইট হবে।

সেই ওয়েবসাইটে অনলাইনে নিবন্ধন করে স্বাস্থ্য কার্ড পাওয়া যাবে। তবে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না তারা অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিবন্ধন করাতে পারবেন। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা ১৮ বছরের কম বয়সিদের জন্য জন্ম নিবন্ধনের অনুলিপি নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে বিনামূল্যে এই কার্ড করা যাবে। প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব হেলথ আইডি নম্বর থাকবে। স্বাস্থ্য কার্ডের আওতায় আসা একজন রোগীর ‘জন্ম থেকে মৃত্য' পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবার সব তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেসে সংরক্ষণ করা থাকবে।

এই কাজের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলো অটোমেশনের কাজ আগেই শুরু হয়েছে। যেসব বেসরকারি হাসপাতাল নিজস্ব অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তারা তাদের সফটওয়্যারকে ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ডসের' সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবেন। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের নিজস্ব সফটওয়্যার নেই এবং নতুন কোনো সফটওয়্যার তৈরি করতে চাচ্ছে না, তাদের সংযুক্ত করতে একটি সফটওয়্যার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং জন্ম নিবন্ধনের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়েছে।

কার্ডে নাগরিকের আগের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব কাগজও থাকবে। অনলাইনেই সব তথ্য থাকায় হেলথ কার্ডের নম্বর দিলেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট চলে যাবে রোগীর ইমেইলে। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই রোগীরা হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষেত্রে সেই কার্ড বহন করলেই চলবে। এক কার্ডেই রোগীর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রোগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (এমআইএস) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এবং মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথমে এই স্বাস্থ্য কার্ড দেয়া হবে। পরের ধাপে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কার্ড দেয়া হবে।

সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. তাসনুভা মারিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘আমরা স্বাস্থ্য কার্ড দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবকিছু সেটআপ করছি। লজিস্টিকস সাপোর্ট, ম্যানপাওয়ার, কার্ড দেওয়ার জন্য ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে রোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাসপাতালে আসার অনুরোধ করছি। ''

তিনি বলেন, ‘‘এখনো তারিখ ঠিক হয়নি, তবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এখানে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। আমি যতটুকু জেনেছি তাতে যারা স্বাস্থ্য কার্ড পাবেন তাদের একটি ইউনিক আইডি নাম্বার থাকবে। ওটা দিয়ে সার্চ দিলেই তাদের আগের চিকিৎসা, রোগ সবকিছু জানা যাবে৷ সিংগাইর উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে একজন রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপা়তালে গেলে চিকিৎসক ওই রোগীর স্বাস্থ্য কার্ড থেকেই সব তথ্য পেয়ে যাবেন। ''

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, একজন নাগরিকের প্রথম যখন হেলথ কার্ড হবে তখন যতদূর সম্ভব তার আগের চিকিৎসা, রোগ ও চিকিৎসাপত্রের বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা হবে। আগের ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার তথ্যও থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, ‘‘এর আগেও আমরা হেলথ কার্ডের বিষয়টি করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করেছি। দাতাদের অর্থায়নে ওই কাজগুলো হয়েছে, কিন্তু সাসটেইনেবল হয়নি। এবার আমরা ন্যাশনাল আইডি কার্ডকে সংযুক্ত করে কার্ডের কাজ করতে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সফটওয়াারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যুক্ত করা হবে। এটা কেমন কাজ করে তা আমরা আগামী বছর পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ-ছয় মাস দেখব। সফল হলে সারাদেশে বিস্তৃত করা হবে। আর আগের প্রকল্পের যে কাজ হয়েছে তাও আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। ''

তিনি বলেন, ‘‘এটা করা গেলে প্রত্যেকের একটা ইউনিক আইডি থাকবে। তিনি দেশের যে হাসপাতালেই যান না কেন ওই কার্ড দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তাকে সঙ্গে করে চিকিৎসার রেকর্ডপত্র বহন করতে হবে না। এই কার্ডে রোগীরা যাতে প্রতারিত না হন সেজন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ আরো কিছু তথ্য থাকবে। ''

তার কথা, ‘‘সরকার সবার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে চায় তার জন্য এই হেলথ কার্ড খুবই জরুরি। এটা করা গেলে এর মাধ্যমেই বাকি কাজ করা যাবে। ''

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অর্ধাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ৷ এর মাধ্যমে কার্ডধারী রোগীদের তথ্য ডিজটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত থাকবে। রোগ নির্ণয় করতে একই পরীক্ষা বার বার করতে হবে না। চিকিৎসকরাও সহজেই একজন রোগীর তথ্য জানতে পারবেন। ''

তার কথা, ‘‘এটা হতে পারে সবার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চিকিৎসা সেবার প্রথম পদক্ষেপ। এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে হেলথ ইন্সুরেন্স যোগ করা যেতে পারে। সিনিয়র সিটিজেনদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ গরিব মানুষকেও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। ''

এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে দেশে সবার জন্য হেলথ কার্ড করা হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমরা ডিজিটালাইজড করছি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার কারণ হচ্ছে, দেশে সবার জন্য একটি হেলথ কার্ড হবে। এতে সবার স্বাস্থ্যের সব তথ্য থাকবে। অন্যান্য দেশেও এভাবে হেলথ কার্ড থাকে।

news24bd.tv/DHL