অন্তরের অন্ধত্বের ওপর আল্লাহর অভিশাপ

অন্তরের অন্ধত্বের ওপর আল্লাহর অভিশাপ

মানুষের বাহ্যিক চোখ যেমন অন্ধ হয়, তেমন অন্ধ হতে পারে মানুষের অন্তরও। অন্তরের অন্ধত্ব বাহ্যিক অন্ধত্ব থেকেও গুরুতর। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য স্থানে অন্তরের অন্ধত্বের ব্যাপারে আল্লাহ মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

হৃদয়ের অন্ধত্বই প্রকৃত অন্ধত্ব

দৃষ্টিশক্তির অন্ধত্বের চেয়ে মানুষের অন্তরের অন্ধত্ব গুরুতর। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দেশভ্রমণ করেনি? তা হলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়। ’ (সুরা: হজ, আয়াত : ৪৬)

সত্য প্রত্যাখ্যানই অন্তরের অন্ধত্ব সুস্পষ্ট সত্য প্রকাশের পর তা প্রত্যাখ্যান করাই অন্তরের অন্ধত্ব।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসেছে। সুতরাং কেউ এটা দেখলে তা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে আর কেউ না দেখলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি তোমাদের রক্ষাকারী নই। ’ (সুরা: আনাম, আয়াত : ১০৪)

অন্ধদের বৈশিষ্ট্য

কোরআনের বর্ণনায় অন্ধ হৃদয়ের অধিকারীদের বৈশিষ্ট্য হলো :

১. অন্ধত্ব প্রকাশ পায় আচরণে : যাদের অন্তরের অন্ধত্ব আছে তাদের আচরণে তা প্রকাশ পায়।

আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরসদৃশ আচরণ করে না। ’ (সুরা: ফোরকান, আয়াত : ৭৩)

২. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী : যাদের অন্তরে ঈমান ও মনুষ্যত্বের আলো নেই, তারাই পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ তাদেরকেই অভিশাপ করেন আর করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন। ’(সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২২-২৩)

৩. অন্ধরা পরকালের প্রতি সন্দিহান : যাদের অন্তরে অন্ধত্ব আছে তারা পরকালের প্রতি সন্দিহান।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আখিরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান তো নিঃশেষ হয়েছে, তারা তো এ বিষয়ে সন্ধিগ্ধ, বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ। ’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬৬)

৪. নিজের কাজকে ভালো মনে করা : যারা অন্তরের অন্ধত্বের শিকার তারা নিজের কাজকে উত্তম মনে করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তাদের দৃষ্টিতে তাদের কাজকে আমি শোভন করেছি। ফলে তারা বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ায়। ’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৪)

৫. তারা নিজেদের বিপদমুক্ত মনে করে : যাদের অন্তর অন্ধ তারা নিজেদের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক থাকে না। ফলে তারা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে না। আল্লাহ বলেন, ‘তারা মনে করেছিল যে তাদের কোনো শাস্তি হবে না, ফলে তারা অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছিল। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৭১)

যেসব কারণে অন্তরে অন্ধত্ব তৈরি হয়

কোরআনের আলোকে নিম্নোক্ত কারণে অন্তরে অন্ধত্ব তৈরি হয়। যেমন,

১. প্রবৃত্তিপূজা : প্রবৃত্তিপূজা মানুষকে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি লক্ষ করেছ তাকে, যে তার খেয়ালখুশিকে নিজের উপাস্য বানিয়েছে? আল্লাহ জেনেশুনে তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কান ও হৃদয় মোহর করে দিয়েছেন, তার চোখের ওপর রেখেছেন আবরণ। ’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ২৩)

২. আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখতা : আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ থাকলে অন্তরে অন্ধত্ব তৈরি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্য তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। ’ (সুরা ; তাহা, আয়াত : ১২৪)

৩. অন্ধ অনুকরণ : অন্ধ অনুকরণের কারণেও মানুষ অন্ধত্বের শিকার হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কোরো, তারা বলে, না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব। এমনকি তাদের পিতৃপুরুষরা যদিও কিছুই বুঝত না এবং তারা সৎপথে পরিচালিত ছিল না, তার পরও?’ (সুরা ; বাকারা, আয়াত : ১৭০)

অন্ধত্বের পরিণতি

অন্তরের অন্ধত্বের কারণে মানুষ নিম্নোক্ত পরিণতি ভোগ করে। তা হলো,

১. অন্ধ হৃদয়ধারীদের প্রতি অভিশাপ : যাদের হৃদয় অন্ধ এবং যারা সত্য গ্রহণ করে না, তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদেরকেই অভিশাপ করেন আর করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন। ’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২৩)

২. অন্তরের অন্ধত্ব হেদায়েতের অন্তরায় : অন্তরে অন্ধত্ব থাকলে মানুষ সুপথ লাভ করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি অন্ধকেও পথে আনতে পারবে না তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে। ’ (সুরা : রোম, আয়াত : ৫৩)

৩. তারা পরকালেও অন্ধ হবে : যারা পার্থিব জীবনে আল্লাহ, তাঁর রাসুল, দ্বিন ও ইসলামের ব্যাপারে অন্ধ হয়ে থাকবে, পরকালে তারা অন্ধ হয়ে উঠবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭২)

৪. অন্ধত্ব জাহান্নামের কারণ : হৃদয়ে অন্ধত্ব লালনকারীদের শাস্তি জাহান্নাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দ্বারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা শ্রবণ করে না; তারা পশুর মতো, বরং তারা অধিক বিভ্রান্ত। তারাই গাফিল। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৯)

৫. অন্তরের অন্ধত্ব গন্তব্যহীন পথ : মানুষের অন্তরের অন্ধত্ব গন্তব্যহীন এক পথের মতো। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাদেরকে আমি তাদের অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে দিই। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১১)

আল্লাহ সবাইকে অন্তরের অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করেন। আমিন।

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর