সৈকতে ১১৬টি ডিম পাড়লো এক সামুদ্রিক কচ্ছপ

সংগৃহীত ছবি

সৈকতে ১১৬টি ডিম পাড়লো এক সামুদ্রিক কচ্ছপ

অনলাইন ডেস্ক

অবশেষে কক্সবাজার সৈকতে ডিম পাড়তে আসছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। মঙ্গলবার রাতে রামুর পেঁচার দ্বীপ সমুদ্র সৈকতে একটি অলিভ রেডিলি প্রজাতির কাছিম ১২৫টি ডিম পাড়ে এবং এরপর নিরাপদে সাগরে ফিরে যায় বলে জানান কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে এটিই কক্সবাজার সৈকতে প্রথম কাছিমের ডিম পাড়ার ঘটনা। আর সেই ডিমগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করে সৈকতের বালিয়াড়িতে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আগামী তিন মাস সেই ডিমগুলোর নিবিড় পরিচর্যা করা হবে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। এরপর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে সেগুলো সাগরে অবমুক্ত করে দেয়া হবে।

মহাপরিচালক বলেন, সাগরে অবমুক্ত করে দেয়ার পর বাচ্চাগুলো ফিরে যাবে হাজার মাইল দূরে মা-বাবার আবাসস্থলে। আর সেই বাচ্চাগুলো একদিন বড় হয়ে আবার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে কোনো এক জ্যোৎস্না রাতে ডিম পাড়তে ফিরে আসবে কক্সবাজার সৈকতে।

যেখানে কাছিমের জন্ম হয়, সেখানেই আবার ডিম পাড়তে ফিরে আসে মা কাছিম। কিন্তু কী কারণে তাদের এমন বিস্ময়কর আচরণ, তা এখনও বিজ্ঞানীদের অজানা।

কক্সবাজার সৈকতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাছিম সংরক্ষণে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজোর্ভেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট (নেকম)। সংস্থাটির ইকোলাইফ প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক জৈব সমুদ্র্রবিজ্ঞানী আবদুল কাইয়ূম বলেন, কক্সবাজারের ‘ভার্জিন আইল্যান্ড’ বা অনাঘ্রাত দ্বীপ খ্যাত সোনাদিয়া দ্বীপটি সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার জন্যও বিখ্যাত। এ দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিম পাড়া, বদরখালীপাড়া, মগচর ও বেলেকের দিয়া; এই পাঁচটি পয়েন্টে ডিম পাড়ে কচ্ছপেরা। গত ছয়-সাত বছর আগেও এসব পয়েন্ট থেকে প্রতিবছর কাছিমের ডিম পাওয়া যেত ১০ থেকে ১২ হাজার, আর গত মৌসুমে পাওয়া গেছে মাত্র ৮শ ডিম। আর চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সৈকতের পেঁচারদ্বীপেই প্রথম ডিম পাড়তে আসে মা কাছিম।

তিনি জানান, গত মৌসুমে কক্সবাজার সৈকতে কাছিম প্রথম ডিম পাড়তে আসে জানুয়ারির ১৫ তারিখ, আর সর্বশেষ ডিম পাড়তে আসে এপ্রিল মাসে। তবে চলতি মৌসুমে ডিম দিলো জানুয়ারির ৩ তারিখ। অথচ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কাছিমের ডিম পাড়ার সময় হলেও এ সময়ে ডিম পাড়তে তারা কক্সবাজার সৈকতে আসছে না।

সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোহাম্মদ শফিকের মতে, মাত্র এক দশক আগেও সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূলের অন্তত ৫৪টি পয়েন্টে শীত মৌসুমে ডিম পাড়তে আসতো শত শত মা কচ্ছপ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অন্তত ১৩টি পয়েন্টে কচ্ছপের দেখা মিলছে না। বাকি পয়েন্টগুলোতেও ডিম পাড়ছে খুব কম। গত মৌসুমে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপ সৈকত মিলে মাত্র ৪৯টি কাছিম ৬ হাজার ৭৬৩টি ডিম পেড়েছে। আর সবগুলোই অলিভ রেডিলি টার্টল বা জলপাই রঙা কাছিম প্রজাতির।

একটি স্বাস্থ্যকর সমুদ্রের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত সি-টার্টল বা সামুদ্রিক কচ্ছপ। এটি পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বা ‘কি-স্টোন প্রজাতি’ হিসাবেও বিবেচিত। পরিবেশে এই ধরনের প্রজাতির বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করে আরো বহু প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব। কাছিমকে ‘সামুদ্রিক ঝাড়ুদার’ও বলা হয়। এরা সমুদ্রের পঁচা-গলা বস্তু খেয়ে দূষণ পরিষ্কার করে।

সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানান, সারা বিশ্বের সাগরে প্রায় সাত প্রজাতির সি-টার্টল বা সামুদ্রিক কচ্ছপ সাঁতার কেটে বেড়ায়। তবে আমাদের বঙ্গোপসাগরে দেখা যায় তিন প্রজাতির। আর এরমধ্যে রয়েছে অলিভ টার্টল বা জলপাই রঙা কাছিম, গ্রিন টার্টল বা সবুজ রঙা কাছিম ও হক্সবিল। তবে কক্সবাজার সৈকতে গত ২ বছর ধরে সবুজ রঙা কাছিম ও গত ৫ বছর ধরে হক্সবিল কাছিমের দেখা মিলছে না বলে জানান নেকমের সমুদ্রবিজ্ঞানী আবদুল কাইয়ূম।

সেন্টমার্টিনে কাজ করা পরিবেশে অধিদপ্তরের কর্মী আবদুল আজিজ বলেন, কচ্ছপের ডিমগুলো হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মূলত দ্বীপে পর্যটকদের চাপসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মা কচ্ছপ অনেকদিন তীরে আসা বন্ধ করেছে। কিন্তু এখন মানুষের উপস্থিতি একটু কম হওয়ায় আবারও মা কচ্ছপ তীরে এসে ডিম দিল। কচ্ছপের ডিমগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের মেরিন পার্কে নিয়ে রাখা হয়েছে। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো ফোটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

news24bd.tv/DHL

এই রকম আরও টপিক