অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল বৈধ, জম্মু-কাশ্মীরকে ফিরিয়ে দিতে হবে রাজ্যের মর্যাদা: সুপ্রিম কোর্ট

সংগৃহীত ছবি

অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল বৈধ, জম্মু-কাশ্মীরকে ফিরিয়ে দিতে হবে রাজ্যের মর্যাদা: সুপ্রিম কোর্ট

অনলাইন ডেস্ক

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রহিতকরণকে চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত বৈধ। কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে অবিলম্বে বিধানসভা নির্বাচনের নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

নির্বাচন করতে হবে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, জম্মু কাশ্মীর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ। জম্মু-কাশ্মীরের যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপরে নজর রেখেই অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা হিসেবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সাফ জানান, ৩৭০ অনুচ্ছেদ সাময়িক ব্যবস্থা ছিল।

প্রধান বিচারপতির এই রায়ের পক্ষে সম্মতি দেন বিচারপতি গাভাই ও বিচারপতি সূর্য কান্ত। ভিন্ন তবে সমান্তরাল মত দেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল। দুইপক্ষেই রায় দিয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।

প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় আরও বলেন, “আমরা মনে করি, ভারতে অন্তর্ভুক্তির পর জম্মু-কাশ্মীর কোনো অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের গুরুত্ব রাখে না। ”

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন বিজেপি সরকার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার মাধ্যমে কাশ্মীরের স্বশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়। এই ঘটনার পরে প্রায় এক কোটি বিশ লাখ মানুষের অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টে এই পদক্ষেপের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়। ৩৭০ ধারা বাতিলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বহু মামলা দায়ের হয়েছিল। সেগুলি একত্রে এনে সম্প্রতি শুনানি শুরু করে ভারতের শীর্ষ আদালত।

আদালতের রায়ে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে:

  • জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকবে লাদাখ।
  • কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে লাদাখের পুনর্গঠনকে বহাল রাখা হচ্ছে। কারণ ৩ অনুচ্ছেদ ৩ রাজ্যের একটি অংশকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে তৈরি করার অনুমতি দেয়।
  • জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার নির্বাচন করাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের মর্যাদা ফেরাতে হবে, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের।
  • জম্মু-কাশ্মীরের গণপরিষদ কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গণপরিষদের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষমতা রয়েছে। রাজ্যের অনুমোদন না নিয়ে কেন্দ্রের কথামতো রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপ এক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে অবৈধ নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বিধানসভার মতামত মানতে বাধ্য নয় সংসদ।
  • পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের রায়ে জানানো হয়, কেন্দ্রের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্তির সিদ্ধান্ত বৈধ। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রপতি জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের নির্দেশও বৈধ। রাষ্ট্রপতির নিত্যদিনের কাজ কখনোই বিচারবিভাগের পর্যালোচনার বিষয় হতে পারে না।

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কাশ্মীরকে স্বশাসন, একটি আলাদা পতাকা এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তবে বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগের দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতেই ন্যস্ত ছিল। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার স্থায়ী বসবাস ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করতে পারতো। এমনকি কাশ্মীরের বাইরের ভারতীয় নাগরিকদের অঞ্চলটিতে জমি কেনায় বাধাও দেওয়ার ক্ষমতা ছিল অতীতের কাশ্মীর সরকারের।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পরে অঞ্চলটি জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। ২০২২ সালে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ পর্যটক অঞ্চলটিতে ঘুরতে গিয়েছেন। এমনকি কেন্দ্র সরকার প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাও দিয়েছে। তবুও, অতীতে বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা বজায় রাখার ছুতোয় পুরো কাশ্মীরজুড়ে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, যাকে মানবাধিকারকর্মীরা ভিন্নমত দমনের প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর জানান, তিনি হতাশ। তবে আশাহত হননি। ওমর জানান, ‘‘আমি হতাশ। তবে আশাহত নই। আমাদের লড়াই জারি থাকবে। বিজেপির এই জায়গায় পৌঁছাতে বহু বছর সময় লেগেছে। আমরাও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ’’

কাশ্মীর অঞ্চলটি মুসলিম অধ্যষিত কাশ্মীর, হিন্দু অধ্যুষিত জম্মু এবং বৌদ্ধ অধ্যুষিত লাদাখ অঞ্চল নিয়ে গঠিত।

news24bd.tv/DHL