‘কোনো রকমে জানালা দিয়া জীবন নিয়া বাইর হইছি’

সংগৃহীত ছবি

‘কোনো রকমে জানালা দিয়া জীবন নিয়া বাইর হইছি’

অনলাইন ডেস্ক

‘ একদম ভোরে কনকনে শীত ছিল, ট্রেনের জানালা বন্ধ করে সিটে বইসাছিলাম। একটু তন্দ্রা আসছিল, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ আর ঝাঁকুনি খাইযা সিট থেইক্যা পইড়া গড়াগড়ি খাইতে লাগলাম। কুনুই ও হাঁটুতে ব্যথা পাইলাম। একপর্যায়ে অনেক কষ্টে সোজা হইলাম।

দেখি ট্রেনের বগি কাত হইয়া পইড়া আছে। আমি কোনো রকমে জানালা দিয়া জীবন নিয়া বাইর হইছি। যাত্রীরা সবাই ভয়ে ডাক-চিৎকার শুরু করছে। ’

এভাবেই গাজীপুরের শ্রীপুরের বনখড়িয়া গ্রামে ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ট্রেনের যাত্রী আমজাদ আলী।

তিনি ওই ট্রেনে চড়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন।  

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোররাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া গ্রামে ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রওহা গ্রামের আসলাম হোসেন (৩৫)। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দুর্ঘটনার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ট্রেনগুলো ঢাকা-বিমানবন্দর-টঙ্গী-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করছে।

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার জনবসতি শূন্য এলাকায় প্রায় ২৫০ মিটার জুড়ে এলোমেলো হয়ে সাতটি বগি পড়ে আছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও চারটি বগি পড়ে আছে রেললাইনের পূর্ব দিকে। বাকি বগিগুলো লাইনের পশ্চিমে পড়ে আছে। সর্বশেষ বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ একটি শক্তিশালী এক্সেভেটর মেশিনের সাহায্যে দুটি বগি লাইন থেকে সরানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে উদ্ধারকারী ট্রেন। পুরো উদ্ধার কাজ চালাতে রেলওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।  

ঘটনার পর পরই সেখানে উপস্থিত হয়েছে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, ডিবি, আনসার সদস্য, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমাণ উৎসুক জনতা ভিড় করে। উদ্ধার কাজে বিপদ এড়াতে ঘটনাস্থলের বিশাল এলাকা ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ঘটনাস্থলে কথা হয় ওই ট্রেনের যাত্রী হাবিবা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই শিশুসহ তারা মাঝামাঝি একটি বগিতে মোট চারজন ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে তাদের বগিটি পাশের গভীর জমিতে পড়ে যায়। বিকট শব্দ হওয়ার পর পরই আমার সন্তানকে পাচ্ছিলাম না। বগি অন্ধকার হয়ে যায়। চিৎকার চেঁচামেচি করছিল সবাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সন্তানদের খুঁজে পেয়ে ওপরের দিকের জানালা দিয়ে বের হই। এতে আমাদের অনেকেই শরীরে আঘাত পেয়েছে।

দুর্ঘটনাস্থলের পাশের বনখড়িয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুমাইয়া ছিলাম। হঠাৎ বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙে যায়। পরে ঘর থাইকা বাইর হইয়া শুনি কান্নাকাটির আওয়াজ। কাছে গিয়া দেখি রেললাইনটি লন্ডভন্ড হইয়া কয়েকটা বগি এলোমেলো পইড়া আছে। যাত্রীদের চিৎকারে তহন আশপাশের শতশত লোকজন ছুটে আসে। যে যার মতো উদ্ধার করে তাদের হাসপাতালে পাঠায়। ’

প্রসঙ্গত, বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের বনখড়িয়া এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি নেত্রকোণা থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- দুর্বৃত্তরা নাশকতা করতে রেললাইনের একটি অংশ কেটে রেখেছিল। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রওহা গ্রামের আসলাম হোসেন (৩৫) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
news24bd.tv/aa