নরসিংদীতে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ: নিহত ৪

নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ।

নরসিংদীতে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ: নিহত ৪

নিজস্ব প্রতিবেক, নরসিংদী

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ও নীলক্ষায় পৃথক ঘটনায় ফের আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অর্ধ শতাধিক লোক। শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় ও দুপুরে নীলক্ষায় গোপীনাথপুরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহতরা হলো তোফায়েল রানা (১৬)। সে একই গ্রামের আবদুল্লাহ ফকিরের ছেলে এবং স্থানীয় বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী।

স্থানীয় রাজনীতিতে সে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

নিলক্ষা ইউনিয়নের বাড়ীগাও গ্রামের সোহরাব (৩০) ও একই ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের সোবান মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭) ও অজ্ঞাত নামে আরো একজন।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় চেয়ারম্যান সিরাজুল হকসহ একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটে।

এরই জের ধরে শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বাবুল মেম্বারের সর্মথক ও প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় পেয়েরাকান্দী গ্রামের সফর আলীর দুই ছেলে সুমন মিয়া (২৮), মামুন মিয়া (২৫) ও মির্জাচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সুমন (২৬)সহ ছয়জন। তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া গুলিবিদ্ধ তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালে নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বলেন, ঝগড়া-বিবাদের জন্য এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নরসিংদী চলে এসেছি। ছেলে পরীক্ষার খোঁজ খবর নিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এভাবে আর কত বাবার বুক খালি হলে থামবে বাঁশগাড়ির এই রক্তক্ষয়ী বিবাদ তা আমাদের জানা নেই। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

নিলক্ষা ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হত্যার পর তাঁর হত্যাকারীরা গা ঢাকা দেয় এবং তারা নিজ এলাকা ছেড়ে সফি মেম্বারের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। মূলত সিরাজুল ইসলাম ও সাহেদ সরকারের সমর্থকদের ঝগড়া নিলক্ষা ইউনিয়নেও  ছড়িয়ে পড়ে।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিন উল কাদির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পৃথক দুইটি ঘটনাই আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ঘটেছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/সুমন/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর