হিজরি পঞ্চম শতকের মুহাদ্দিস ছিলেন যে নারী

প্রতীকী ছবি

হিজরি পঞ্চম শতকের মুহাদ্দিস ছিলেন যে নারী

আলেমা হাবিবা আক্তার

আয়েশা বিনতে হাসান বিন ইবরাহিম (রহ.) ছিলেন হিজরি পঞ্চম শতকের একজন শ্রেষ্ঠ আলেমা, মুহাদ্দিসা ও ওয়াজকারী। তিনি মুসলিম নারীদের ভেতর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখেন, বিশেষত তিনি সদুপদেশ প্রদানের মাধ্যমে নারীদের নৈতিক ও আল্লাহভীতির জীবনযাপনে উৎসাহিত করতেন। আয়েশা বিনতে হাসান (রহ.) উম্মুল ফাতাহ ইস্পাহানিয়া ওরকানিয়া নামেও পরিচিত। প্রথম সন্তানের প্রতি সম্বোধন করে তাঁকে উম্মুল ফাতাহ, ইরানের ইস্পাহানের প্রতি সম্পৃক্ত করে ইস্পাহানিয়া এবং নিজ গ্রাম ওরকানের প্রতি লক্ষ্য রেখে ওরকানিয়া বলা হয়।

আয়েশা বিনতে হাসান (রহ.)-এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। তিনি ইরানের ইস্পাহানে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই বেড়ে ওঠেন। পারিবারিক পরিমণ্ডলেই তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। ধারণা করা হয়, পিতা হাসান বিন ইবরাহিম (রহ.)-এর কাছেই তিনি প্রাথমিক স্তরের বইগুলো পাঠ করেন।

আয়েশা বিনতে হাসান (রহ.) বিখ্যাত মুহাদ্দিস, লেখক ও হস্তলিপি শিল্পী আবু আবদুল্লাহ বিন মান্দাহ (রহ.)-এর কাছে হস্তলিপি ও ‘ইমলা’ শাস্ত্র (আরবি যতিচিহ্ন) শেখেন। তাঁর কাছ থেকে তিনি হাদিসেরও পাঠ গ্রহণ করেন। এ ছাড়া মুহাম্মদ বিন জিসনিস ও আবদুল ওয়াহিব বিন শাহসহ সমকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসদের কাছে হাদিস শ্রবণ করেন। ফিকহ তথা ইসলামী আইনবিজ্ঞানেও তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল।

আয়েশা বিনতে হাসান (রহ.) শুধু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেনি, বরং নিজের জীবন জ্ঞানের সেবায় উৎসর্গ করেন। তিনি নিয়মিত হাদিসের পাঠদান করতেন। তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ বিন হামাদ বিকরিতি, ইসমাইল হাম্মামি, হুসাইন বিন আবদুল মালেক আল খাল্লাল, সাঈদ বিন আবির রেজা ও হাফেজ ইসমাইল বিন মুহাম্মদ (রহ.) প্রমুখ মুহাদ্দিস।

আয়েশা (রহ.) নারীদের ধর্মীয় জ্ঞান, নীতি, নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি শেখাতে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর বাড়িতে নিয়মিত নারীদের ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার মজলিস হতো।

দূর-দূরান্ত থেকে নারী শিক্ষার্থী ও আল্লাহপ্রেমীরা তাতে অংশ নিতেন। কখনো কখনো তিনি নিজেও নারীদের মজলিসে উপস্থিত হয়ে আলোচনা করতেন।

আল্লামা ইবনুস সামআনি (রহ.) বলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে হাফেজ ইসমাইল (রহ.)-এর কাছে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, তিনি একজন নেককার নারী ও সুযোগ্য আলেমা ছিলেন। তিনি নারীদের নসিহত করতেন তথা ধর্মীয় উপদেশ দিতেন। ইবনে মান্দাহর কাছ থেকে হস্তলিপি শিক্ষা করেন। তাঁর কাছেই আমি প্রথম হাদিস শ্রবণ করি। আমার পিতা আমাকে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অধিক ইবাদতকারী ও আল্লাহসাধক নারী।

জ্ঞানগত পাণ্ডিত্যের পাশাপাশি আয়েশা বিনতে হাসান (রহ.) আল্লাহপ্রেম ও আধ্যাত্মিক ময়দানেও সমকালীন মনীষীদের ভেতর অগ্রগামী ছিলেন। আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহপ্রেমে নিষ্ঠার কারণে শ্রোতারা সহজেই তাঁর কথা দ্বারা প্রভাবিত হতো এবং দূর-দূরান্ত থেকে তাঁর মজলিসে অংশগ্রহণ করত।

মুজামুল বুলদান গ্রন্থকার বলেন, তিনি জ্ঞান, উপদেশ দান ও সুপথ পরিদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। শ্রোতাদের ওপর কথার প্রভাব ছিল অপরিমেয়। আয়েশা বিনতে হাসান (রহ.) দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। সমকালীন মনীষীদের মধ্যে তিনি সবার পরে ইন্তেকাল করেন। তিনি ৪৬৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। বরেণ্য এই নারী মনীষার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না।