ইসলামের দৃষ্টিতে প্রার্থীর আচরণ যেমন হওয়া উচিত

প্রতীকী ছবি

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রার্থীর আচরণ যেমন হওয়া উচিত

আতাউর রহমান খসরু

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা নানা অঙ্গীকার নিয়ে ভোটারদের কাছে হাজির হচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার। এসব রাজনৈতিক প্রচারণায় নানা ধরনের প্রলোভন, প্রতারণা ও অবাস্তব অঙ্গীকারের দেখা মেলে।

আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সহিংস আচরণ করেন। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব আচরণ অগ্রহণযোগ্য।

প্রার্থীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

রাজনৈতিক প্রচারণায় যেসব বিষয় লক্ষ্য করে চলতে হবে তা হচ্ছে :

১. সত্য বলা : প্রার্থী নিজের সম্পর্কে এবং তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে সত্য বলবেন। সর্বপ্রকার মিথ্যা থেকে বিরত থাকা; কেননা সত্যই মানুষকে মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা তাকে ধ্বংস করে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলে ঈমান আনে, তারাই তাদের প্রতিপালকের কাছে সত্যবাদী ও শহীদ। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৯)

২. অঙ্গীকার পূরণের নিয়ত রাখা : ভোটার মনোরঞ্জনের জন্য প্রার্থী এমন কোনো অঙ্গীকার করবেন না, যা পূরণের নিয়ত তাঁর নেই। প্রার্থী এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করবেন, যা তিনি পূরণ করার নিয়ত রাখেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৪০)

৩. সাধ্যাতীত অঙ্গীকার না করা : প্রার্থী ভোটারদের এমন কোনো বিষয়ে অঙ্গীকার করবেন না, যা তাঁর সাধ্যাতীত। যদিও তাঁর অঙ্গীকার পূরণের ইচ্ছা থাকে। কেননা এটা তাঁকে ভবিষ্যতে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত করতে পারে। আল্লাহ মানুষকে সাধ্যাতীত কোনো বিষয়ের নির্দেশ দেননি।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই এবং সে মন্দ যা করে উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৮৬)

৪. আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে অঙ্গীকার করা : কোনো কাজের ব্যাপারে যতটা আস্থা রাখেন, তার চেয়ে বেশি আস্থা রাখেন মহান আল্লাহর ওপর। তাই তিনি কোনো অঙ্গীকার করলে আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে অঙ্গীকার করবেন। আর আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে অঙ্গীকার করার পদ্ধতি হলো, প্রার্থী বলবেন–ইনশাআল্লাহ বা আল্লাহ চাইলে আমি এটা করব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “কখনো তুমি কোনো বিষয়ে বোলো না, আমি তা আগামীকাল করব, ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ এ কথা না বলে। যদি ভুলে যাও তবে আল্লাহকে স্মরণ করো এবং বলো, সম্ভবত আমার প্রতিপালক আমাকে এর চেয়ে সত্যের নিকটতর পথপ্রদর্শন করবেন। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৩-২৪)

৫. প্রতারণা না করা : ইসলাম মানবজীবনের কোনো ক্ষেত্রেই প্রতারণাকে অনুমোদন দেয় না। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রেও তা নিষিদ্ধ। সুতরাং প্রার্থী তাঁর প্রচার-প্রচারণা, লোক সমাগম ও নির্বাচনী অঙ্গীকারে প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ তার হিসাব তোমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৮৪)

৬. রাস্তাঘাট বন্ধ না করা : নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে প্রার্থীরা অনেক সময় মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেন। এটা শরিয়ত অনুমোদন করে না। তাই নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিষয়গুলো লক্ষ রাখা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তায় বোসো না। ’ সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের তো এর প্রয়োজন হয়। পরস্পরে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বসতে হলে রাস্তার হক আদায় করে বোসো। ’ সাহাবিরা বললেন, আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কী? রাসুল (সা.) বললেন, রাস্তার হক হলো—১. দৃষ্টিকে অবনত রাখা, ২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া, ৩. সালামের জবাব দেওয়া, ৪. সৎকাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা। (বুখারি, হাদিস : ৬২২৯)

৭. অন্যের সম্পদ নষ্ট না করা : প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে অনেক সময় মানুষের বাড়ির দেয়ালে, দরজা-জানালায় ও গাড়িতে পোস্টার-স্টিকার মারেন এবং দেয়াললিখন করেন। পরে এটা ঠিক করতে ব্যক্তির অর্থহানি হয়। ইসলামে অন্যের সম্পদ নষ্ট করা নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে প্রস্থান করে, তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত ও জীবজন্তু ধ্বংস করার চেষ্টা করে। আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২০৫)

৮. সহিংস আচরণ না করা : নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রার্থী নিজেও কোনো সহিংস আচরণ করবেন না, উসকানিমূলক কথা বলবেন না এবং অনুসারীদেরও তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। কেননা আল্লাহ সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কাজ পছন্দ করেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়; আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্তদের ভালোবাসেন না। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬৪)

৯. অপব্যয় না করা : নির্বাচনের সময় বহু প্রার্থীকে বিচার-বিবেচনাহীনভাবে অর্থ ব্যয় করতে দেখা যায়, যা পরবর্তী সময়ে তাঁর জন্যই বিপদ ডেকে আনে। ইসলাম সব ধরনের অপচয়-অপব্যয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘আর কিছুতেই অপব্যয় কোরো না। যারা অপব্যয় করে তারা তো শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি অতি অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)

১০. আত্মপ্রশংসা পরিহার করা : প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণার সময় আত্মপ্রশংসা থেকে বিরত থাকবেন। কেননা আত্মপ্রশংসা থেকে অহমিকা সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, তিনিই ভালো জানেন কে আল্লাহভীরু। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩২)

আল্লাহ সবাইকে সুপথ দান করুন। আমিন।

এই রকম আরও টপিক