নেত্রকোনায় কোরিয়া ও বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা

মঞ্চে অন্যদের সঙ্গে উপবিষ্ট যতীন সরকার

নেত্রকোনায় কোরিয়া ও বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা

অনলাইন ডেস্ক

‘দক্ষিণ কোরিয়ার যে জাগরণ তা কেবল এশিয়ান হিসেবেই নয়, বিশ্বনাগরিক হিসেবেও কোরিয়াকে আমাদের আগ্রহ-বিন্দুতে পরিণত করেছে। ’ নেত্রকোনায় সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনায় এই কথা বলেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশিষ্ট উদ্ভিদতাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর।

নেত্রকোনা শহরের সাতপাইয়ের বানপ্রস্থে সোমবার বিকেলে কোরিয়া ও বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে আলোচনায় দেশের বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক যতীন সরকার। তিনি কোরিয়ার সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অনুবাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

কিছু কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি কোরিয়ার কবিদের জীবনদৃষ্টি ও দার্শনিক বোধের দিকে নজর কাড়েন উপস্থিত দর্শকদের। তিনি বলেন, ‘কথায় আছে, সাত নকলে আসল খাস্তা। অনুবাদেও অনেক সময় তাই ঘটে।

সমাজের সব ক্ষেত্রে আমাদের যে ইংরেজি-নির্ভরতা সেদিকে ইঙ্গিত করে অনুবাদে ইংরেজি-নির্ভরতা কাটিয়ে মূল ভাষার আশ্রয়ী উঠার পরামর্শ দেন তিনি।

‘সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ: সমাজ, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কবি ও প্রাবন্ধিক সরোজ মোস্তফা।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশিষ্ট উদ্ভিদতাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর। তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার যে জাগরণ তা কেবলমাত্র এশিয়ান হিসেবে নয় বরং বিশ্বনাগরিক হিসেবেও কোরিয়াকে আমাদের আগ্রহবিন্দুতে পরিণত করেছে। কোরিয়ার জাপানি ঔপনিবেশ ও বাংলায় বৃটিশ ঔপনিবেশের একটা ঐতিহাসিক মিল রয়েছে। এ দুটি ঐতিহাসিক বাস্তবতায় নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাসের ঐক্য দেখা যায়। কোরিয়ার হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো ১৯৪৫ সালে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাগ হয়ে যায়। তেমনি ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হয়ে যায় বৃটিশদের কারণে। ’ সভাপতি এই আলোচনার আয়োজক প্রতিষ্ঠান এবং আলোচকদের প্রশংসা করেন।

কোরিয়া ও বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে এই আলোচনায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার। তিনি কোরিয়ান সাহিত্য এবং অন্যান্য দেশের সাহিত্য নিয়ে অনুবাদ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা উজান এবং অনুবাদকদের ধন্যবাদ জানান।

নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বিধান মিত্র কোরিয়ার কবিতা ও গল্পের উদ্ধৃতি টেনে সে দেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মিলের জায়গাগুলো তুলে ধরেন। কোরিয়ার গল্পে নারীদের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি যে আমাদের দেশেও ছিল কিংবা আছে তা উল্লেখ করে তিনি, দুই দেশের সমাজের মানুষের অনগ্রসরতার চিত্র উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি তিনি কোরিয়ার গল্প থেকে উদাহরণ টেনে মানুষের অভিন্ন আবেগ এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির চিত্র তুলে ধরেন।

কবি, ভ্রামণিক, মানবাধিকার ও সমাজকর্মী শাহেদ কায়েস কোরিয়ার বসবাস ও শিক্ষাজীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে কোরিয়ার সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোরিয়ার মানুষের সঙ্গে আমাদের লোকজনের আবেগের মিলের জায়গা হচ্ছে, তারাও কান্না পেলে হাউমাউ করে কাঁদে, তারা আনন্দিত হলে উল্লাসে হৈহুল্লোড় করে। অন্য অনেক সংস্কৃতির মতো এক্ষেত্রে তাদের চেপে রাখার কোনো ব্যাপার নেই। ’ তিনি বলেন, ‘জনপ্রিয় ও বিনোদনের যে সংস্কৃতি উপাদান যতটা না জীবনমুখী, তারচেয়ে বেশি বাণিজ্যমুখী। আজকের হিন্দি কিংবা কলকাতার টিভি সিরিয়াল যে মূলধারার জীবনের রূপ নয়, তেমনই কোরিয়ার কে-ড্রামা কিংবা কে-পপ সেখানকার মানুষের জীবনের পুরো রূপ নয়। ’

কবি ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা মামুন খান বলেন, ‘কোরিয়ার সাহিত্য পড়তে গিয়ে মনে হলো যে জীবন এই নগর-উন্নয়ন এবং আধুনিকতার বাইরে সেই জীবনের সঙ্গে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের, যেকোনো দেশের ও সংস্কৃতির মানুষেরই স্বাভাবিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ’

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক গল্পকার সাফি উল্লাহ কোরিয়ার সাহিত্যের ওপর সুবিস্তৃত আলোকপাত করেন। কোরিয়ার বিভিন্ন কবির নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করেন তিনি।

তনুশ্রী সরকারের গাওয়া ‘ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর’ রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লেখক ও সাংবাদিক ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ। তিনি এই আলোচনার আয়োজনের উদ্দেশ্য এবং কোরিয়ার সাহিত্য অনুবাদের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক সাইফুল্লাহ এমরান।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান এলটিআই কোরিয়ার সহযোগিতায় এই আলোচনার আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা উজান। আয়োজকদের কৃতজ্ঞতায় ছিল শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়। এই আয়োজন উপভোগ করেন নেত্রকোনার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মী, সুধীসমাজ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

news24bd.tv/ডিডি