প্রজন্মকে বিজ্ঞান শেখানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিজ্ঞানমুখী করা 

শিশির ভট্টাচার্য্য

প্রজন্মকে বিজ্ঞান শেখানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিজ্ঞানমুখী করা 

শিশির ভট্টাচার্য্য

বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কেউই অস্বীকার করতে পারবে না, না ব্যক্তি, না সমাজ। মানুষ বিজ্ঞানকে ভালোবাসে বিজ্ঞানের জন্য নয়, বিজ্ঞানের উপজাত প্রযুক্তির জন্য। মাদ্রাসা-শিক্ষিত তালেবানও একসময় বিজ্ঞান-প্রযুক্তিমুখী শিক্ষা চাইবে। কারণ তাকে দ্রোন বানাতে হবে ইরানের মতো।

যে ইরান আফগানদের ছোটলোক মনে করে, একদিন না একদিন তাকে উচিত জবাব দিতেই হবে। যুক্তিপ্রবণ জাতি অন্ধবিশ্বাসপ্রবণ জাতির চেয়ে কাম্য হবার কথা। কারণ বিশ্বাস মাত্রেই যাচাই-অযোগ্য মিথ্যা গালগল্প, মিথ্যা মানেই একটা ধোঁকা এবং ধোঁকা মানেই সময় নষ্ট, ব্যক্তির কিংবা জাতির।  

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞান শেখানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তাদের মধ্যে বিজ্ঞানমুখী মানসিকতার উন্মেষ করা, তাদের বিজ্ঞান-মনস্ক করে তোলা।

বিজ্ঞানমুখী, প্রশ্নপ্রবণ জাতি তৈরি হলে অন্ধবিশ্বাস দূর হবে,  বিজ্ঞানচর্চা নিজে থেকেই শুরু হবে এবং প্রযুক্তি আপনিই জন্ম নেবে। নবম-দশম শ্রেণীতে ঠুঁসে বিজ্ঞান গেলানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জীবন ও জগৎকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে দেখতে শেখানো। এটুকু করা পর্যন্ত রাষ্ট্রের দায়িত্ব, বাকিটা ব্যক্তি নিজেই করে নিতে পারবে। বিজ্ঞান কাকে বলে? দুই শব্দে বিজ্ঞান হচ্ছে ‘ভুলপ্রমাণযোগ্য সাধারণীকরণ’ বা ‘ফলসিফাইয়েবল জেনারালাইজেশন’। বিজ্ঞানে দুটি পর্যায় বা পর্ব আছে। প্রথম পর্যায়ে বিশেষ হাইপোথিসিস মাথায় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিন্যাস করতে হয়। এটা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ট্যাক্সোনোমিক পর্যায়, কিন্তু এটা বিজ্ঞান নয়।  

দ্বিতীয় পর্যায়ে বিন্যস্ত তথ্যের ভিত্তিতে এমন একটি সাধারণ সূত্রের প্রস্তাব করতে হয়, যে সূত্রটি ভুলপ্রমাণযোগ্য বা ফলসিফাইয়েবল। বিজ্ঞানের কোনো সূত্র সত্য নয়, ভুলপ্রমাণযোগ্য আপাত সত্য। এই সূত্রকে ভুল প্রমাণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। ভুল প্রমাণিত হলে সূত্র সংশোধন করতে হবে কিংবা বাতিল করে নতুন সূত্রের প্রস্তাব করার চেষ্টা করতে হবে। ব্যস এটুকুই বিজ্ঞান। দেশে এবং বিদেশে প্রচুর সহকর্মী দেখেছি, যারা বিজ্ঞানের শিক্ষক, কিন্তু বিজ্ঞান কী জানেন না। সত্তরের দশকে নবম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান বইতে আমি বিজ্ঞানের উপরোক্ত সংজ্ঞাটি শিখেছিলাম। নবম-দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করার চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি।  বর্তমান কারিকুলামের বিরোধিতা যারা করছেন, তারা কি চান শিশুরা একেকজন মুখস্তবাজ তোতাপাখি হয়ে উঠুক?

তারা কি চান শিশুরা শ্রেফ বিজ্ঞান মুখস্ত করুক এবং তারা বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ না হয়ে উঠুক? তারা কি চান, শিশুরা সব কিছু নিয়ে প্রশ্ন করতে না শিখুক? এই শিক্ষাক্রম (সম্ভবত) এমন একটি জাতি তৈরি করতে চাইছে (পারবে কিনা সেটা ভিন্ন প্রশ্ন) যে জাতি (সম্ভবত) মহল বিশেষের পছন্দ নয় এই কারণে যে তারা ভাবছে, এমন একটি জাতি আখেরে তাদের হীন স্বার্থের জন্য হানিকারক হবে।
 লেখক: ভাষাবিজ্ঞানী 

news24bd.tv/ডিডি

সম্পর্কিত খবর