কিয়ামতের দিন যেভাবে মানুষের জন্য ঝগড়া করবে কোরআন

কিয়ামতের দিন যেভাবে মানুষের জন্য ঝগড়া করবে কোরআন

 শরিফ আহমাদ

কোরআন তিলাওয়াত সর্বোত্তম একটি ইবাদত। এই ইবাদতে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তিলাওয়াতকারীরাই আল্লাহর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫)
কোরআন তিলাওয়াতকারীর দৃষ্টান্ত

হাদিসে কোরআন তিলাওয়াতকারীর দৃষ্টান্ত বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে, তার উদাহরণ হচ্ছে ওই লেবুর ন্যায়, যা সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যক্তি (মুমিন) কোরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে এমন খেজুরের মতো, যা সুগন্ধহীন কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যক্তি যে কোরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হচ্ছে রায়হানজাতীয় গুল্মের মতো, যার সুগন্ধ আছে কিন্তু খেতে বিস্বাদ যুক্ত ।

আর ওই ফাসিক যে কোরআন একেবারে পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে ওই মাকাল ফলের মতো, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোনো সুঘ্রাণও নেই। (বুখারি, হাদিস : ৪৬৫৪)

কোরআন মুখস্থকারীর ফজিলত

হাদিসে কোরআন মুখস্থকারীর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিসে হাফেজদের ফেরেশতাদের শ্রেণিভুক্ত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়েছে এবং তা হিফজ করেছে, এর হালালকে হালাল বলে মেনেছে এবং হারামকে হারাম বলে গ্রহণ করেছে, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং সে তার পরিবারের এমন ১০ জনকে সুপারিশ করতে পারবে, যাদের প্রত্যেকের ওপর জাহান্নাম অবধারিত ছিল। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৬)

কিয়ামতের দিন কোরআনের সুপারিশ

কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে আল্লাহর রহমত ও দয়ায় রেহাই পাওয়া যাবে। তাঁর অনুমতিক্রমে কোরআন সুপারিশের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করবে। কেননা কিয়ামতের দিন তা তিলাওয়াতকারীদের জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে...। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৪৭)

কিয়ামতের দিন কোরআনের ঝগড়া

রোজহাশরে কোরআন তার পাঠককে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে প্রয়োজনে ঝগড়া করবে। আরশের ছায়ার নিচে বসার ব্যবস্থা করে দেবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন তিনটি জিনিস আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবে। সে তিনটি জিনিস হলো : এক. কোরআনুল কারিম। কোরআন সেদিন বান্দার ব্যাপারে ঝগড়া করতে থাকবে। কোরআনের জাহের ও বাতেন দুটি দিক আছে। দুই. আমানত। তিন. আত্মীয়তা। আত্মীয়তা সেদিন উচ্চৈঃস্বরে বলবে, যে আমাকে মিলিয়ে রেখেছে আল্লাহপাক তাকে রহমতে সঙ্গে মিলিত করুন। আর যে আমাকে ছিন্ন করেছে আল্লাহপাক তাকে রহমত থেকে ছিন্ন করুন। (শরহুস সুন্নাহ, হাদিস : ৩৪৩৩)

কোরআন অবহেলার পরিণাম

কোরআন তিলাওয়াত করা, মর্মার্থ উপলব্ধি করা এবং আমল করাই প্রকৃত মুমিনের কাজ। কোরআন থেকে দূরে সরার কারণে দুনিয়ায় কখনো কখনো নেমে আসে লাঞ্ছনা। পরকালীন দুর্ভোগ তো আছেই। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, এই কোরআন (কিয়ামতে) সুপারিশকারী, তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। (কোরআন) সত্যায়িত প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে নিজ সামনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পেছনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১২৪; সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪২৩)

মহান আল্লাহ আমাদের কোরআনময় জীবন দান করুন।

এই রকম আরও টপিক