বছরের দীর্ঘতম রাত সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য

সংগৃহীত ছবি

বছরের দীর্ঘতম রাত সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য

অনলাইন ডেস্ক

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত হচ্ছে এ বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ রাত। রাতটি ইংরেজিতে উইন্টার সলস্টিস এবং বাংলায় দক্ষিণায়ন নামে পরিচিত। এই রাতের মধ্য দিয়ে উত্তর গোলার্ধে শীতকাল শুরু হতে যাচ্ছে। একইসাথে দক্ষিণায়নের মধ্য দিয়ে উত্তর গোলার্ধে সূর্যের আলোর পরিমাণ বাড়তে থাকার মাধ্যমে দিন ক্রমশ বড় হতে থাকবে।

দক্ষিণায়নের রাতে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে। এই দিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবস্থান ভেদে সূর্যের আলোর পরিমাণে তারতম্য ঘটে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এই দিন সূর্যের আলো থাকবে ৭ ঘন্টা ৪৯ মিনিট, যা দেশটির জন্য বছরের দীর্ঘতম দিনের তুলনায় প্রায় ৮ ঘন্টা কম।  

দক্ষিণায়নের রাতে পৃথিবী ধূমকেতু থেকে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে যায়।

এর ফলে এই রাতে উত্তর গোলার্ধের আকাশে উল্কা বৃষ্টি হয়।

দক্ষিণায়নের পর প্রতিদিন উত্তর গোলার্ধে সূর্যের আলোর পরিমাণ একটু একটু করে বাড়তে থাকবে এবং উত্তরায়ন বা সামার সলস্টিসের আগ পর্যন্ত এমনটা চলতে থাকবে। সাধারণত জুন মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখের ভেতরে উত্তরায়ন হয়ে থাকে।

সলস্টিস একটি ল্যাটিন শব্দ যার মানে হচ্ছে সূর্যের স্থায়ী থাকা।

উত্তর গোলার্ধে যখন দক্ষিণায়ন হয় ঠিক তখনই দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তরায়ন হয়। পৃথিবীর দুই প্রান্তে এদিন ঋতু পরিবর্তন ঘটে, যার মানে হচ্ছে ব্রাজিল এবং নিউ জিল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে এদিন বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন হয়।

যদিও জোতির্বিদ্যায় দক্ষিণায়নকে শীতকাল শুরুর দিন হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু বাস্তবে শীতকালের শুরু হওয়া নির্ভর করে তাপমাত্রার তারতম্যের ওপর। কেউ যদি ২২ ডিসেম্বর দুপুরে রোদে দাঁড়ায় তবে তিনি তার যে ছায়াটি দেখতে পাবেন সেটি বছরের দীর্ঘতম ছায়া হবে। এছাড়াও, দক্ষিণায়নের দিনে সূর্য মকরক্রান্তি রেখার ঠিক ওপরে অবস্থান করে, যা নিরক্ষরেখা থেকে ২৩ ডিগ্রী দক্ষিণে অবস্থিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোককথায় অতি প্রাচীনকাল থেকে দক্ষিণায়নের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। দক্ষিণায়নের পর থেকে সূর্যের আলোর ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়াকে অনেক দেশের লোককথায় পুনর্জন্মের চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়।

ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং সুইডেনে দক্ষিণায়ন উপলক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে জুল নামক এক সূর্যদেবতার ফিরে আসাকে উদযাপন করা হয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অধিবাসীরা এই দিন কাঠের গুড়ি পোড়ানোর মাধ্যমে থর নামক এক দেবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, যার দায়িত্ব হচ্ছে সূর্যের উষ্ণতাকে ফিরিয়ে দেওয়া।

ফিনল্যান্ডের লোককথায় দক্ষিণায়নের আগ পর্যন্ত সূর্যের আলো ক্রমশ কমতে থাকাকে একজন ডাইনীর কারসাজি বলে মনে করা হয়, যে কিনা সূর্য এবং চাঁদকে একটি পাহাড়ের ভেতরে বন্দী করে রাখে।

ইরানে দক্ষিণায়নের দিনকে মিথরা নামের এক দেবতার জন্মগ্রহনের মূহুর্ত বলে মনে করা হয় এবং এইদিন দেশটিতে ইয়ালদা উৎসব উদযাপন করা হয়।

চীনে দক্ষিণায়নের দিনটিকে ডংজি উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। চীনের অধিবাসীরা মনে করে দক্ষিণায়নের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আলো ফিরে আসা শুরু করেছে। এইদিন চীনা পরিবারগুলো একসাথে হয়ে ট্যাং ইউয়ান নামক একধরনের বিশেষ ভাত খেয়ে থাকে।

যুক্তরাজ্যে দক্ষিণায়নের দিনে মানুষ স্টোনহেঞ্জ ঘুরতে যায়। এইদিন সূর্যোদয়ের সময় সূর্যালোক স্টোনহেঞ্জের পাথরগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে পতিত হয়।

সূত্রঃ আল জাজিরা

news24bd.tv/ab

সম্পর্কিত খবর