মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তারেক রহমান

রোববার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তারেক রহমান

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক নেতাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেছে দলটি। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এ সাক্ষাৎকার চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।

গতকাল থেকে রংপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড।

আজ সোমবার বরিশাল বিভাগ ও বিকালে খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সোমবার সকাল ৯টার কিছু সময় পর শুরু হয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার।  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।

বরিশাল-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম।

প্রথমেই বরিশাল-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রকৌশলী আবদুস সোবহানকে ডাকা হয়। কী কারণে প্রার্থী হয়েছেন তার কাছে জানতে চায় মনোনয়ন বোর্ড। এর পর একে একে অন্য প্রার্থীদেরও ডাকা হয়। ভিডিও কনফারেন্সে তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে বেশ কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সাক্ষাৎকারে ওইসব নেতাদের অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা কেমন ছিল সে বিষয়টি জানতে চাইছেন তারেক রহমানসহ মনোনয়ন বোর্ড। যদিও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আমলনামা আগে থেকেই বোর্ডের টেবিলে রয়েছে। তার কপি পাঠানো হয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের কাছেও। সেই ভূমিকা তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় মনোনয়নপ্রত্যাসীদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে।  

বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা দলটি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে চাইলে নেতাদের বহু কাঠখড় পোহাতে হবে। প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন এবং হামলা মামলার শিকার হতে হবে দলের নেতাকর্মীদের। এমতাবস্থায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজ এলাকার কর্মী-সমর্থকদের আগলে রাখতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে জানতে চায় দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ব্যাপক সমর্থন নিয়ে টিকে থাকতে পারবেন কিনা সেদিকে গুরুত্ব দিয়েছেন তারেক রহমান। মনোনয়নপ্রত্যাসীদের কাছে জানতে চাইছেন যার যার এলাকায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে।

এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি'র দলীয় মনোনয়ন চাইছেন অনেক তরুণ রাজনীতিকও। তাদেরও দলে অবদান খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  বিশেষ করে নতুনদের কাছে তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, দলের জন্য অবদান, এলাকায় কী করছেন, মামলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে।

গতকাল ও আজ সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা এমনটাই জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জানিয়েছেন, কোন নেতার কী অবদান, বিগত ১২ বছর কে কী করছেন, সে খবর দলের কাছে আছে। এর পরই প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে- এই ১২ বছর প্রার্থী সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের দ্বারা কী ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন? তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে কীভাবে ছিলেন? এবং নিজে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন?

জানতে চাওয়া হচ্ছে, এলাকায় প্রার্থীর অবস্থান কতটা শক্তিশালী। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারবে কিনা?

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় যোগ দেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি জানান, তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের ভূমিকা এবং নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানতে চাইছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনোনয়ন বোর্ডে রয়েছেন।  

মামলার হাজিরার দিন ধার্য থাকায় গতকাল অনুপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সদস্য স্থায়ী কমিটির নেতা মির্জা আব্বাস।

নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ সোমবার বরিশাল ও খুলনা বিভাগ; মঙ্গলবার চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট; বুধবার ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হবে।

১২ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি করে বিএনপি। দলটি সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪ হাজার ৫৮০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। সব ফরম জমা পড়লে এই খাতে বিএনপির আয় হবে ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বিএনপির মনোনয়ন ফরমের দাম ছিল ৫ হাজার টাকা। অবশ্য ফরম জমা দেয়ার সময় ২৫ হাজার টাকা করে জামানত নিয়েছে দলটি।

সম্পর্কিত খবর