নৌকা সমর্থকের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আহত ফজলুলের মৃত্যু

বোমায় নিহত ফজলুল হক।

নৌকা সমর্থকের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আহত ফজলুলের মৃত্যু

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব সরকারের বাড়িতে গত মঙ্গলবার বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত ফজলুল হকের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জিন্নাহ নামে আরও একজন আহত হয়েছেন। তবে বোমা বিস্ফোরণের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব সরকার।

নিহত ফজলুল হক কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার মিনপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র মামলাসহ ৩টি মামলা রয়েছে। আহত জিন্নাহ সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সাদিয়া চাঁদপুর গ্রামের তাছের আলীর ছেলে। তবে জিন্নাহ আলীর কোন খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

এদিকে থানা পুলিশও ওই দিন দাবী করেছিল ওই বাড়িতে গিয়ে তারা কোনো বোমার আলামত পাননি। কিন্তু বোমা বিস্ফোরণে আহত একজন ঢাকায় হাসপাতালে মৃত্যু হওয়ার সংবাদ শনিবার ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসে।

নিহতের দুই ভাই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অন্যান্য প্রার্থীদের অভিযোগ নির্বাচনে নাশকতা করার জন্যই ওই বাড়িতে বোমা তৈরি করা হচ্ছিল।

বেলকুচি পৌরসভার সুবর্নসাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড কাউন্সিল তারেক হোসেন জানান, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে বেলকুচি পৌর এলাকার সুবর্ণসাড়া গ্রামে মোতালেব হোসেন সরকারের বাড়িতে বিকট শব্দ হয়। শব্দ শুনে স্থানীয়রা ছুটে গেলেও কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাৎক্ষণিক আহত দুই ব্যক্তিকে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাসে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হলেও তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছুই জানানো হয়নি। তাদের ধারণা করে বোমা বা ককটেলজাতীয় কিছু তৈরির সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

নিহত ফজলুর ভাই মজনু বলেন, বুধবার (২০ ডিসেম্বর) জানতে পারি আমার ছোট ভাই ফজলু বোমা হামলায় আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে আমরা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সিরাজগঞ্জের বেলকুচির মোতালেব নামে এক শ্রমিকলীগ নেতা বোমা তৈরির জন্য আমার ভাইকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানেই বোমা বিস্ফোরণেই ফজলু আহত হয়েছেন। তাকে একদিন লুকিয়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব। পরে ওর চিৎকার সইতে না পেরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন। শুক্রবার আমার ভাই হাসপাতালে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, ফজলু দীর্ঘ দিন যাবত রাজবাড়ীতে থাকতেন।

নিহত ফজলুল মেয়ে জামাই রকি বলেন, শুক্রবার দুপুরে মারা গেছেন, শনিবার সন্ধ্যাতেও লাশ আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা খুব কষ্টে আছি। এখনো লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।

ফজলুর ছোট ভাই বিপুল জানান, মোতালেব নামে সিরাজগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনের আগে বোমা বানানোর জন্য আমার ভাই ফজলুকে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর জন্যই আমার ভাই মারা গেছে।

ঘটনার পর শ্রমিকলীগ কর্মী মোতালেব সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ওই সময় তিনি বলেছিলেন, আমরা নৌকার সমর্থক। প্রচার কাজে ব্যস্ত রয়েছি। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ির মহিলারা রান্নার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে প্রেশার কুকার বিস্ফোরিত হয়েছিল। বিষয়টি রংচং লাগিয়ে বোমা বিস্ফোরণের গুজব ছড়ানো হচ্ছে, আসলে তা সত্য নয়।

শনিবার ফজলুর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মোতালেব গা-ঢাকা দিয়েছেন। যে কারণে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকার শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ফজলুর মৃত্যুর পর হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বোমা বিস্ফোরণে ফজলুর রহমানের শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাকে ১৯ ডিসেম্বর ৪ টায় ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফজলুল মারা গেছে। শরীরে আঘাতের যে চিহ্ন রয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে বোমব্লাস্ট। চিকিৎসকও লিখেছেন বোমা বিস্ফোরণে তিনি মারা গেছেন।

ওসি আরও বলেন, নিহতের লাশ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। নিহতের স্বজনরাও এখানে আছেন। ঘটনাস্থল বেলকুচি হওয়ায় ওই থানাতেই এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। যোগাযোগ করা হলেও ওই থানার পুলিশ এ বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখায়নি। আহত আরেক ব্যক্তির প্রসঙ্গে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। নিহত ফজলুর বিরুদ্ধে খুন ও ডাকাতিসহ ৩টি মামলা রয়েছে।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, ফজলু নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, শনিবার সিরাজগঞ্জ জেলায় নির্বাচন সংক্রান্ত সভা করতে এসেছিলেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। প্রশাসন, প্রার্থী ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সাথে সভা শেষে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বোমা বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি আমি জেনেছি। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল শনিবার সন্ধ্যায় জানান, ঢাকায় প্রক্রিয়া শেষ করে নিহতের স্বজনরা সিরাজগঞ্জ এসে অভিযোগ করলে সে বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

news24bd.tv/FA