‘ঘুমালে গায়ে মলমূত্র নিক্ষেপ করে তারা’

খোলা আকাশের নিচে ৭৫ বছরের আমেনা বেগম।

‘ঘুমালে গায়ে মলমূত্র নিক্ষেপ করে তারা’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

‘জীবনে আর কিছু চাই না, নিজের বসত ভিটায় থাইক্কা স্বামী সংসার লইয়া মরবার চাই। আফনেরা মানুষরে জিগাইন, এই ভিটা আমার, সবাই জানে। এরফরেও এই শীতের মাইঝে মেলা দিন ধইরাই পলিথিনের নিচে থাহি, খাই। ’ দখল হওয়া ভিটে-মাটির পাশেই চোখের পানি ঝড়িয়ে এ প্রতিবেদকের সামনে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের ৭৫ বছরের আমেনা বেগম।

এই বৃদ্ধা বলেন, জীবনের শেষ সময়ে নিজ ভিটাতে থাকতেই ১৭ বছর পর আসেন নিজ ভিটে-মাটিতে ঘর নির্মাণ করতে। দীর্ঘদিনের উপার্জনের অল্প-স্বল্প টাকা দিয়ে একটি টিনসেড ঘর করতে গেলে প্রতিপক্ষরা টিন, ঘরের পালাসহ সব কিছুই মারধর করে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমরা ঢাকার ঈমামগঞ্জ থাকাবস্থায় জমিটি ভাইপো কাশেম নামের একজনের কাছে বিক্রি করে দেয় এবং কাশেম তার নামে জমা-খারিজ করে নেয়। বিষয়টি আমি শুনে স্ব-পরিবারে আমার ভিটায় অবস্থান নিয়েছি।

কিছু জমি পৈত্রিক সূত্রে। আর সাড়ে ৬ শতক জমি বোন ফাতেমা খাতুনের কাছ থেকে ২০০১ সালে ক্রয় করি।

স্থানীয়রা জানান, হতদরিদ্র বৃদ্ধা আমেনা বেগম পৈত্রিক ওয়ারিশ ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া ১৩ শতক জমিতে প্রায় ১৮ বছর আগে ঘর নির্মাণ করে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন। কিছুদিন পর ভাইপো বাচ্চুর নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তার স্বামী জয়নাল আবেদীনকে (৭৭) কুপিয়ে জখম করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায় ঢাকার ঈমামগঞ্জে। সম্প্রতি এই জমিতে এসে ঘর নির্মাণ করলে রাতের আধারে ঘর ভেঙে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফলে ২৬দিন যাবত পলিথিনের ছাউনি দিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

আমেনার বোন ফাতেমা খাতুন জানান, সাড়ে ৬ শতক জমি বোনের কাছে বিক্রি করি, প্রতিপক্ষরা ভূয়া খারিজ দিয়ে ভিটে ছাড়া করতে চাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ভিটে না ছাড়ায় রাতে তাদের ছাউনির ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর মলমূত্র নিক্ষেপ করে প্রতিপক্ষের লোকজন।

বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদল জানান, এটা আসলে ‘আমেনার ভিটা’, নামেই পরিচিত ওই এলাকায়। ওরা নিরীহ, ঘর ভেঙ্গে নেবার পর আবার ঘর নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ হতে আমি টিনও দিয়েছি।

news24bd.tv

উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভূমি) মো. এরশাদ উদ্দিন জানান, সরেজমিনে সার্ভেয়ার এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা ওই জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। উভয়পক্ষকে দলিলাদি নিয়ে আগামী সোমবার আমার অফিসে থাকতে বলা হয়েছে।

আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল জাকির বলছেন, ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। তবে দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে উপজেলা প্রশাসন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/নোমান/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর