ছেলেকে নিয়ে রংধনুর রফিকের জালিয়াতির সাম্রাজ্য

ছেলেকে নিয়ে রংধনুর রফিকের জালিয়াতির সাম্রাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

জমি জালিয়াতিতে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের যোগ্য সহযোগী তার পুত্র কাওসার আহমেদ অপু। পিতা-পুত্রের যোগসাজশে একই জমি একাধিকবার বিক্রি ও ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ।

আবার একের পর এক বন্ধকী জমি অবমুক্ত না করেই বেআইনিভাবে নিয়োগ দেন আম মোক্তার বা প্রতিনিধি। আইনজীবীরা বলছেন, এটি প্রতারণার সামিল।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অবৈধভাবে অর্জিত এসব অর্থের বড় অংশ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরে।

এওয়াজবদল বা বিনিময়সূত্রে ২০১৯ সালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের ২২১৯/এ প্লটের ১৬৫ ও ৩৩ শতাংশ আয়তনের দুটি জমির মালিক হন রফিকুল ইসলামের পুত্র কাওসার আমমেদ অপু। ২০২০ সালে একই প্লটের ১০৫ শতাংশ আয়তনের আরও এক জমির মালিকানা পান রফিকুল ইসলাম নিজে।

এরমধ্যে প্রথম জমিটির একটি অংশ ২০২১ সালে স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখায় বন্ধক রেখে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেন অপু।

পরের বছর রফিকুলের মালিকানায় থাকা জমিটিও স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের একই শাখায় বন্ধক রাখা হয়।

জমি জালিয়াতিতে সিদ্ধহস্ত পিতা-পুত্র মিলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকা দুই বন্ধকী জমিসহ তিনটি জমিই আবার বন্ধক রাখেন ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখায়। অনিয়ম করে এবার তারা ব্যাংকটি থেকে তুলে নেন ২০০ কোটি টাকা।

অপুর জালিয়াতি এখানেই শেষ নয়। একের পর এক বন্ধকী জমিতে বেআইনিভাবে নিয়োগ দিয়েছেন আম মোক্তার। এই যেমন এওয়াজবদলসূত্রে পাওয়া বসুন্ধরা আবাসিকের আই ব্লকের ১৩৩১, ১৩৩২, ১৩৪৯ এবং ১৩৫০ নম্বর প্লটের ৩৬ শতাংশ জমি ২০১৭ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিকট বন্ধক রেখে ঋণ নেন কাওসার। ২০২০ সালে সেই জমি অবমুক্ত না করেই অন্য এক প্রতিষ্ঠানকে আম মোক্তার বা আইনগতভাবে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন অপু।

একইভাবে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আরও তিনটি জমি প্রথমে ব্যাংকে বন্ধক রেখে টাকা হাতিয়ে নেন অপু। পরে তথ্য গোপন করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেন আম মোক্তার হিসেবে।

প্রতারণার এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী ও অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, এভাবে বন্ধকী জমিতে আম মোক্তার নিয়োগ প্রতারণার সামিল। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

পিতা পুত্রের এমন জালিয়াতিতে একদিকে জমি কিনে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ অন্যদিকে, দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকিং খাত।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, জমি নিয়ে যারা প্রতারণা করে তারা একটা চক্র বলা যায়। অনেকে প্রতারণার শিকার হয়ে মামলা করছে এবং প্রতিকারও পাচ্ছে।  সেইসাথে অপরাধীদের শাস্তিও হচ্ছে।

পলিসি রিসার্চ ইন্সিটিটিউটের পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এরকম কর্মকাণ্ডের সাথে মানুষ জড়িয়ে পড়ছে। অবৈধভাবে অর্জিত এসব অর্থের বড় অংশ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরে।

এমন প্রতারণা বন্ধে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও আইন প্রয়োগে আরও কঠোর হওয়ার তাগিদ তাদের।

এই রকম আরও টপিক