কোরআনের বর্ণনায় দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার কয়েকটি আমল

কোরআনের বর্ণনায় দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার কয়েকটি আমল

 মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

দুশ্চিন্তা মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিটি মানুষই তা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজে, পবিত্র কোরআন-হাদিসে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার বহু আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি আমল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো- 

১. তাকওয়া অবলম্বন : যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জীবনটা সহজ করে দেবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন, এবং তিনি তাকে তাঁর ধারণাতীত উৎস থেকে দান করবেন রিজিক।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্রা। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
২. নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া : দুশ্চিন্তা ও বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য সর্বদা আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হয় নামাজের মাধ্যমে।

এ কারণে যারা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চায়, তাদের উচিত নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। রাসুল (সা.) নিজেও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।  হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩১৯)
৩. তাওবা-ইস্তেগফার : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, এবং তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।

(সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)
অর্থাৎ তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, তার রিজিক ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করেন। যেগুলো দুনিয়াতে দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হয়।

৪. ইবাদতে মগ্ন থাকা :  দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম অস্ত্র হলো আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন রাখার চেষ্টা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব।

তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানি দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৭)
৫. দোয়া : মানুষ যখন কোনো বিপদে পড়ে, তার উচিত মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়ায় লিপ্ত হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমার বান্দারা যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন তুমি বলো, আমি তো কাছেই আছি। যখন কোনো প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই। অতএব তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

৬. আল্লাহর ওপর আস্থা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। (সুরা : তালাক : ০৩)

৭. অধিক দরুদ পাঠ : অধিক দরুদ পাঠের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানুষের দুশ্চিন্তা দূর করে দেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর দশবার রহমত নাজিল করবেন, তাঁর দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য দশটি মর্যাদা উন্নীত করা হবে। (নাসায়ি, হাদিস : ১২৯৭)
 

এই রকম আরও টপিক