ফিরে দেখা ২০২৩: বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা

সংগৃহীত ছবি

ফিরে দেখা ২০২৩: বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা

অনলাইন ডেস্ক

২০২৩ সাল যদি আপনাকে হতাশ করে থাকে তবে আপনি একা নন। বিশ্ববাসীর ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়েছে এ বছরটি। চলমান যুদ্ধগুলো বেগবান হয়েছে, নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরম আকার ধারণ করেছে।

সব মিলিয়ে এ বছর গণমাধ্যমে খুশি হওয়ার মতো সংবাদ খুব কমই প্রকাশিত হয়েছে। তাই চলুন বছর শেষে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক ২০২৩ সালে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া কোন কোন ঘটনা আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবনতি

২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। আফ্রিকায় একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে, থাইল্যান্ডে একটি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ক্ষমতায় এলেও দেশটির সামরিক বাহিনী তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।

ভারত সরকার বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন ব্যবহার করে সমালোচকদের বাকরুদ্ধ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সমালোচকদের ‘জীবানু' আখ্যা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জনসংখ্যার দিক দিয়ে চীনকে ভারতের ছাড়িয়ে যাওয়া

গত এক শতাব্দী ধরে সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশ হিসেবে রেকর্ড ছিলো চীনের হাতে, যা ভঙ্গ হয়েছে ২০২৩ সালে। চীনকে ছাপিয়ে ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। প্রায় ১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন মানুষের বসবাস এখন ভারতে, এবং চীনের নাগরিকেরা যেখানে বুড়িয়ে যাচ্ছেন সেখানে ভারতের জনসংখ্যা আগামী কয়েক দশক ধরে কেবলই বাড়তে থাকবে। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ চীনের জনসংখ্যা কমে যাবে প্রায় ১০০ মিলিয়ন এবং চীনা নাগরিকদের গড় বয়স হবে ৩৯ বছর থেকে ৫১ বছর। এর বিপরীতে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা হবে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন এবং এই বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নাগরিকদের গড় বয়স হবে ৩৯ বছর।

আজারবাইজান কর্তৃক নাগোর্নো-কারাবাখ দখল

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সুর এখন অব্দি বেজে চলেছে পূর্ব ইউরোপ জুড়ে। আজারবাইজানের নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে মূলত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে এবং তারা কখনোই আজারবাইজানের শাসন মেনে নিতে চায়নি। ১৯৯১ সালে আর্মেনিয়ানরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং এর ফলে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৪ সালে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সম্পাদিত হলে আর্মেনীয়রা স্বাধীনতা অর্জন করে এবং আজারবাইজানের কাছ থেকে কিছু অঞ্চলও লাভ করে। ২০২০ সালে অঞ্চলটিতে আবারও যুদ্ধ শুরু হয়। এবারও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সম্পাদিত হয় কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আজারবাইজান আবারও আক্রমণ করে। এবারের আক্রমণে আজারবাইজান পুরো নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল দখল করে নেয় এবং প্রায় এক লাখ আর্মেনীয় নাগরিক আর্মেনিয়ায় পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধ ২০২৪ সালেও চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বালিতে পরস্পরের সাথে কথা বলার পর সবাই ধারণা করেছিলো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অস্তিত্ব দুই দেশের মাঝে আবারও সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এই বছরের জুনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন চীন সফরে গেলেও সম্পর্কের কোনো উন্নতি তো ঘটেইনি বরং যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে চীনের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশ্বের প্রধান দুই পরাশক্তির মধ্যকার এই সম্পর্কের টানাপোড়েন ২০২৪ সালকেও প্রভাবিত করবে বলে সবাই প্রায় নিশ্চিত।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ

গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অঞ্চলটির ২৩ লাখ অধিবাসীর প্রায় ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের বুকে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই যুদ্ধ শুরু হয়। ২০২৩ সালের বিশ্ব রাজনীতিতে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধই ছিলো সবচেয়ে বড় ঘটনা।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ফলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের গুরুত্ব অনেকটাই চাপা পরে গেছে। তবুও, এই যুদ্ধের ফলে ইউরোপের নিরাপত্তা এখনও হুমকির মুখে রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় দুই বছর হতে চললেও যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধে ইউক্রেন প্রথম দিকে সুবিধা করতে পারলেও বিগত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদের আটকে দেয়া ৬১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ইউক্রেনকে বেশ অসুবিধায় ফেলেছে। এই মুহূর্তে দেশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নতুন যোদ্ধার সন্ধানে রয়েছে।

ইমরান খানের গ্রেপ্তার এবং নওয়াজ শরীফের ফেরা

ইমরান খানের জন্য ২০২২-২০২৩ ছিলো খুবই ঘটনাবহুল একটি বছর। ২০২২ সালের এপ্রিলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তোশাখানা মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ইমরান খানের অপসারণের পর তার প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরীফের ভাই শেহবাজ শরীফের ক্ষমতায় আরোহন এবং দীর্ঘদিন নির্বাসনে কাটানোর পর নওয়াজ শরীফের দেশে ফিরে এসে মুসলিম লীগের হাল ধরা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ন একটি ঘটনা ছিলো।

ভারতে জি-২০ সম্মেলন

সেপ্টেম্বর ৯-১০ তারিখে ভারত ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশসমূহের জোট জি-২০ এর সম্মেলন আয়োজন করে। সম্মেলনে মোট ৪৩ জন রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিয়েছিলেন। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সম্মেলনে যোগ দেননি। এই সম্মেলনটি আয়োজন করে ভারত বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের গুরুত্বকে অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক