রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যেতে পারে যে দেশ!

ফাইল ছবি

সমর বিশেষজ্ঞদের মতামত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যেতে পারে যে দেশ!

অনলাইন ডেস্ক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে এ প্রশ্ন এখন অনেকের। শেষ হলেও কে হারবে কে জিতবে এ নিয়েও রয়েছে অনেক জল্পনা-কল্পনা। সমর বিশেষজ্ঞরাও মতামত জানাতে পিছিয়ে নেই।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলছে।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মেরিঙ্কা সম্পূর্ণরূপে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু।

শহরটি দনবাস পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) এর একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসাবে পরিচিত। শহরটি দনবাস থেকে ঠিক পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) এক ঘোষণায় শোইগু জানান, ইউক্রেনের সেনাদের থেকে এখন সম্পূর্ন মুক্ত মেরিঙ্কা শহরটি।

 

এরপরদিনই রাশিয়ার অধিকৃত ক্রিমিয়ায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে দেশটির একটি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের দাবী জাহাজটিতে করে ড্রোন সরবরাহ করা হচ্ছিলো। খবর আল জাজিরার।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক পোস্টে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, আমাদের পরিচালিত এক বিমান হামলায় নভোচারকাস্ক নামক একটি রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস হয়েছে। ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করেছে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। ফলে একদিনে হামলা পা্ল্টা হামলা চললেও পুতিন বলছেন, খুব শিগগিরই শেষ হবে এ যুদ্ধ। উল্টোদিকে ইউক্রেনের জেলেনস্কি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য চেয়ে না পেয়ে কিছুটা হতাশই হয়েছেন।

ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরুর পর প্রথমবারের মতো দীর্ঘ এক সংবাদ সম্মেলনে মি. পুতিন বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিবিসির “ডিরেক্ট লাইন” নামের এক অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি বলেন, ইউক্রেন ফুরিয়ে আসছে। আগামী ছয় মাসের ভেতর ইউক্রেন নতি স্বীকার করতে বাধ্য।

কিন্তু অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ যুদ্ধের ভবিষ্যত হিসেবে দেখছেন রাশিয়ার বিজয়কে।  তেমনই এক বিশ্লেষক লিয়াম কলিন্স। লিয়াম কলিন্স প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মডার্ন ওয়্যার ইনস্টিটিউট, ইউনাইটেড স্টেটস মিলিটারি একাডেমি ওয়েস্ট পয়েন্টের।
তিনি ৫ টি কারণ দেখিয়েছেন। সূত্র , এশিয়া টাইমস।

এক. ইউরোপে যুদ্ধ এখনও একটা বাস্তবতা
২০০৮ সালে জর্জিয়াতে রাশিয়া আগ্রাসন চালায়। ২০১৪ সালে অবৈধভাবে ক্রিমিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয় মস্কো। ওই বছরই ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সরাসরি সমর্থন দেয় রাশিয়া। এ তিন ঘটনাতে মনে না হলেও ইউক্রেনে গত বছর রাশিয়া যে আগ্রাসন শুরু করেছে তাতে স্পষ্ট যে ২০২৩ সালে এসেও ইউরোপ মহাদেশে যুদ্ধ একটি বাস্তবতা।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়কার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোকে অচল বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আগ্রাসন শুরুর পরে জোটটিই শক্তিশালী হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ দেশগুলোও জোটটি শুরুর ৭০ বছর পর এসে সদস্য হওয়ার আবেদন করছে।

দুই, রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে ব্যর্থতা
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট ইউক্রেন ও ক্রিমিয়াতে রাশিয়ার আগের আগ্রাসন থামাতে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই ব্যর্থতা ছিল জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের ব্যর্থতা। জর্জিয়ায় আগ্রাসন ও ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্ত করার পর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তা অনেকটা বাহুতে হালকা করে চাপড়ে দেওয়ার মতো একটা ব্যাপার।

এবারে আগ্রাসন শুরুর আগে মাসের পর মাস ধরে রাশিয়া যখন ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করছিল, এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো শাস্তি দেওয়ার হুমকি দেওয়া ছাড়া কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। এখনও সেইভাবে জেলেনস্কির পাশে তারা নেই। যদিও মুখে ইউক্রেনের জন্য মায়াকান্না করছে।

তিন. সামরিক শক্তিতে রাশিয়া এগিয়ে
সংঘাত যখন শুরু হয়, তখন কাগজে-কলমে রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর সামরিক শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের পরই তাদের অবস্থান। সামরিক শক্তি বিবেচনায় ইউক্রেন বিশ্বে ২২তম।

চার. যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে না
ট্যাংক দিয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সাজালেই হবে না, সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গোলাবারুদের জোগানও দিতে হবে। কেননা, সেগুলো উৎপাদনের সক্ষমতা ইউক্রেনের নেই। দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের সক্ষমতা যাতে গড়ে ওঠে, সে জন্য আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত গোলাবারুদের জোগান দিতে হবে ইউক্রেনকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও সেভাবে জোগান দিচ্ছে না।


পাঁচ: যুদ্ধ শহরাঞ্চলে সংঘটিত হচ্ছে
সামরিক বাহিনী সব সময়ই শহরাঞ্চলের যুদ্ধ এড়াতে চায়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনে শহরাঞ্চলে যুদ্ধের যে ব্যাপকতা তাতে করে বলা যায় সামরিক বাহিনীগুলো এখনো এ ধরনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়।

পশ্চিমা কি সত্যি চায় ইউক্রেন জিতুক ?
এ প্রশ্ন ফ্যাঙ্ক লুডভিগের। তিনি যুক্তরাজ্যের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সমর বিশেষজ্ঞ।

দ্য গার্ডিয়ানে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি  বলেন, ট্যাংকের বিষয়টিই বিবেচনা করা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো এ পর্যন্ত ১৪০টি আধুনিক ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানি জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে ১৮টি লিওপার্ড-২ এস ট্যাংক (কিয়েভে এ বিষয়ে যে গুজব চালু রয়েছে তা হলো, এর মধ্যে অর্ধেক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়) দিয়েছে। জার্মানি সামরিক সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আরও কিছু ট্যাংক দিচ্ছে, অবশ্য সেগুলো আগের লিওপার্ড-১ এস মডেলের। যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ৩১টি আব্রাহাম-২ ট্যাংক এবং ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে ১৪টি ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া স্পেন, কানাডা, পোল্যান্ড ও নরওয়ে আরও বেশ কয়েকটা ট্যাংক দিতে চেয়েছে। যাহোক, যুক্তরাষ্ট্রের আব্রাহাম ট্যাংকস আগামী বছরের শরতের আগে কিয়েভে পৌঁছাবে না। আর ডেনমার্ক ও নেদারল্যন্ডসের ট্যাংক আগামী বছরের শুরুর আগে ইউক্রেন পাবে না। স্বল্প মেয়াদে ন্যাটোর দেশগুলো সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ (বিশেষ করে কামানের গোলা) সরবরাহ করতে চাপে পড়েছে।

যদিও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভান্ডারে দুই হাজারের বেশি সংখ্যক এমআইএ২ আব্রাহাম ট্যাংক মজুত আছে। এ ছাড়া হাজার হাজার সাঁজোয়া যানও তাদের রয়েছে। ফলে প্রতিশ্রুত যুদ্ধ সরঞ্জাম ইউক্রেনের কাছে না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমান ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি বিবেচনা করে বলাই যায়, চীনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো কারণ নেই যুক্তরাষ্ট্রের। ফলে ইউক্রেনে যদি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ যদি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে সেগুলো কখনোই আর ব্যবহৃত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার পেছনে পশ্চিমের মৌলিক স্বার্থ যদি হয় যুদ্ধে কিয়েভ বিজয়ী (যদিও কিছু কিছু সময় এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়) তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আরও আন্তরিক হতো ইউক্রেনের ব্যাপারে।  

news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক