‘চারদিক দিয়ে ঘিরে নির্মম নির্যাতন করে মন্ত্রী গাজীর সন্ত্রাসীরা’

ডিআরইউ'র সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা

‘চারদিক দিয়ে ঘিরে নির্মম নির্যাতন করে মন্ত্রী গাজীর সন্ত্রাসীরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার প্রচারণা চালানোর সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা ও মারধর করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাসী শমসের ও তার বাহিনী তাদের উপর হামলা করে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও মূল হামলাকারী গ্রেপ্তার না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা মো. চাঁন মিয়া।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার প্রচারণার সময় ২৫ ডিসেম্বর সাড়ে ১১টায় চনপাড়ার রাসেল নগর ইউনিয়নে যান ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ৩৫ জন। এসময় বাঙালি জাতির বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপরে গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাসী শমসেরের নেতৃত্বে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে।

তিনি বলেন, শমসের ও তার লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

এক পর্যায়ে শমসের ও তার লোকজন প্রচারণা ও গণসংযোগকালে মুক্তিযোদ্ধা হাসান মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধার আজিজুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াসহ উপস্থিত ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা দেয়। এতেই ক্ষান্ত হননি, তারা হাসান মাহমুদের পিছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের অণ্ডকোষে লাথি দিয়ে গুরুতর আহত করেন।

মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া বলেন, ঘটনার পর ২৫ ডিসেম্বর আমি বাদী হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করি। কিন্তু সংসদ সদস্য গাজীর কারণে শমসেরকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় নাই। আমরা চাই তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা বিচারের আওতায় আনা হোক।

কিছুদিন আগেও শমসেরকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গাজীর শক্তির কারণে তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। অপরাধ করে গাজীর বাড়িতে আশ্রয় নেয় শমসের। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে শমসেরের নেতৃত্বে ১২৮ টি মাদকের কেন্দ্র পরিচালিত হয়। গাজী ও গাজীর পুত্র পাপ্পা গাজী এবং তাদের এপিএস এমদাদের নেতৃত্বে এই সমস্ত মাদকের কারবার পরিচালনা করেন শমসের। এখান থেকে কোটি কোটি টাকা মাসোয়ারা পায় গাজী পরিবার ও এপিএস এমদাদ।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক বলেন, আমরা প্রচারণা করছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের উপর নৌকার মিছিল দিয়ে হামলা করা হয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার অণ্ডকোষে লাথি দেয় সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও আমার গায়ে লাথি-ঘুষা দেয়।

মুক্তিযোদ্ধা এম এ সেলিম বলেন, শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জের ছেলে। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজী এই এলাকার সন্তান না। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করলেও গাজী পরিবার রূপগঞ্জে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তাদের কুকীর্তি, জোরপূর্বক জমি দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়ার তথ্য রূপগঞ্জের জনসাধারণ জানে। তাই নির্বাচনকালীন সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা, পোস্টার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার বিচার চাই। শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রায় পাঁচ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। গাজীর দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে আমরা নৌকার পরিক্ষিত সৈনিক ও রূপগঞ্জের সন্তানের প্রচারণা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সানাউল্লাহ মিয়া, ফজলুর করিম মোল্লা, নজরুল ইসলাম, আক্তার হোসেন মোল্লা, হাসান মাহমুদ, মো: আক্তারুজ্জামান (বাবুল), মো: ইব্রাহিম খলিল, আব্দুল মান্নান আজাদ, মো: আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া, মো: নাজীম উদ্দিন, মো: আব্দুল ওহাব মিয়াসহ আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধারা।

এই রকম আরও টপিক