নৌকার পক্ষে বৈঠকের ভিডিও ভাইরাল, ৩৫ শিক্ষককে অব্যাহতি

নৌকার পক্ষে বৈঠকের ভিডিও ভাইরাল, ৩৫ শিক্ষককে অব্যাহতি

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে নৌকার পক্ষে বৈঠক করায় ৩৫ জন শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদরের একাংশ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য শাজাহান খানের নিজ বাসভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই সভার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবায়দুর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশে বসা ছিলেন শাজাহান খান নিজেই।

ওবায়দুর রহমান খানের বক্তব্যে শোনা গেছে, আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শাজাহান খান প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নির্দেশিত হয়েছেন যে তিনের (মাদারীপুর-৩) আসনের উপরে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এবং তিনের (মাদারীপুর-৩) প্রচার চালানোর জন্য। সেই হিসেবে আমরা কিন্ত তিনের (মাদারীপুর-৩) উপরে বেশি দায়িত্ব পালন করছি।

আপনাদেরও তিনে (মাদারীপুর-৩) সেই ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনে (মাদারীপুর-৩) যদি আমার গোলাপ ভাইকে নির্বাচিত করতে পারি। তাহলে দাদায় (শাজাহান খান) ও গোলাপ ভাই মিলে দীর্ঘদিনের জন্য মাদারীপুরকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসতে পারবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষকরা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে সভার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান হঠাৎ আমাদেরকে তাদের বাসায় ডেকেছে। তিনি আমাদের মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমাজের সভাপতি। সভাটি হওয়ার কথা ছিল উপজেলা পরিষদে। কিন্তু সেটা না হয়ে এমপি (শাজাহান খান) মহোদয়ের বাসায় মিটিং হয়েছে।

এই বিষয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন বলেন, মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাজাহান খান তার নির্বাচনী এলাকার পছন্দের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্ট করার অপচেষ্টা করছে। যেহেতু সদর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন আমাদের মাদারীপুর-৩ আসনের মধ্যে পড়েছে। তাই সে সেখানে নিজের প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা ইতোমধ্যে শাজাহান খানের নির্বাচনী এলাকার কোনো লোককে প্রিসাইডিং ও পোলিং এজেন্ট হিসেবে যাতে নিয়োগ না করা হয়, সেই জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আর ২৬ ডিসেম্বর শাজাহান খানের বাসায় যে শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে, তারা সবাই তার কর্মী। তারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই তারাসহ আরও যারা আছে, সবাইকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও থেকে পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে আশা করি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ করিম বলেন, যারা ওই মিটিংয়ে ছিলেন তাদের আমাদের জেলা স্যার শোকজ করেছেন। এ বিষয়ে স্যার ভালো বলতে পারবেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার আহমদ আলী জানান, বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে আসার সাথেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবগত করা হয়েছে। ২ দিনের মধ্যে তদন্ত করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক