'থার্টি-ফাস্ট নাইট' উদযাপনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি  

থার্টি-ফাস্ট নাইট উদযাপন।

'থার্টি-ফাস্ট নাইট' উদযাপনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি  

অনলাইন ডেস্ক

'থার্টি-ফাস্ট নাইট' অর্থাৎ ইংরেজি বছরের পালাবদল। ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে পহেলা জানুয়ারির শুরু। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশেষ করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা নানা আয়োজনের মাধ্যমে এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করে থাকে।

ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসব প্রচলন করেন।

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে। ধীরে ধীরে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়াকের ক্যালেন্ডার (খ্রিস্টানদের ধর্মযাজক পোপ গ্রেগরির নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।

ইংরেজি নববর্ষের উদযাপন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ। এটা ইসলামি সংস্কৃতি নয়।

অথচ আমাদের দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজনে মুসলমানরাও পিছিয়ে নেই। একজন মুসলমান হিসেবে তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি আমরা কিছুতেই গ্রহণ করতে পারি না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন: হে মুমিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদিগকে বন্ধু-রুপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধু-রূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না (সূরা:মায়িদা,আয়াত :৫১)

এই বিষয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিজাতির কৃষ্টি-কালচারে সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভূক্ত হবে (আবূ দাউদ)।

আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো- আতশবাজি, পটকা ফুটানো , মদ্যপান, নৃত্য পরিবেশন, ডিজে পার্টি, বেহায়াপনা ও রকমারী খাবারের আয়োজন ইত্যাদি।

ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার জন্য খ্রিস্টানদের অনুকরণে আমাদের সমাজের একশ্রেণীর মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে কখন ঘড়ির কাটায় ১২:০০ বাজবে। আর ঠিক ঐ মুহূর্তে 'হেপি নিউ ইয়ার' উচ্চারণের মাধ্যমে শুরু হয় এক হৈ-হুল্লোড় আর উল্লাস ধ্বনিতে ফেটে পড়ে নববর্ষ প্রেমিকরা।

আতশবাজি আর পটকাবাজিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে শহর বন্দর। আর এর মাঝে কত যে অঘটন ঘটে যায়, কতই-না পৈশাচিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয় তা কেই-বা জানে।

বিগত ২০০০ সালের থার্টি ফাস্ট নাইটে ঢাকার টিএসি চত্তরে বাঁধন নামে একটি মেয়ে লাঞ্চিত হয়েছিল। বিষয়টি তখন সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। দিনের পর দিন পত্রিকার শিরোনাম ছিল বিষয়টি। সব দিক থেকেই যারা বাঁধনকে লাঞ্চিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছিল।

একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কয়েক দশক আগেও এ দিবসটি এভাবে উদযাপন করা হতো না। কিন্তু ভিনদেশের সংস্কৃতিতে আজ এ দিবসগুলোতে শরীয়ত বিরোধী ও গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে ঈমানদাররা তাদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করছেন।  

মূলত এটা খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি হলেও প্রতি বছর অনেক মুসলিমও পালন করে থাকেন। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ি, শরীয়তের সীমালঙ্ঘন করে ফেলি। অশ্লীলতা ও নোংরামীতে লিপ্ত হয়ে পড়ি। এটা মুসলমানদের কোন সভ্যতা, সংস্কৃতি হতে পারে না। বরং এটা একটি অপসংস্কৃতি।  

মুসলমানদের চিন্তা-চেতনা হওয়া উচিৎ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী। একটা বছরের বিদায় মানে নিজ জীবন থেকে একটি বছরের বিদায়। কী করলাম, কী হারালাম, কী পেলাম তা নিয়ে ভাবা উচিৎ। ভালো-মন্দের হিসেব-নিকেশ করা।

লেখক: জোবায়ের আল তাহামী
শিক্ষার্থী, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,  সিনিয়র শিক্ষক, মুহাম্মদ উল্লাহ ভূইয়া মডেল মাদরাসা।

news24bd.tv/aa