বৈদ্যুতিক গাড়ি: পরিবেশবান্ধব বুলির আড়ালে লুকানো যে নির্মম বাস্তবতা

সংগৃহীত ছবি

বৈদ্যুতিক গাড়ি: পরিবেশবান্ধব বুলির আড়ালে লুকানো যে নির্মম বাস্তবতা

অনলাইন ডেস্ক

ডিজেল কিংবা পেট্রোল চালিত গাড়ি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরাও বহুদিন ধরে সেই মত দিয়ে আসছেন। এ নিয়ে নানা গবেষণায় উঠে এসেছে হরেক রকম তথ্য। অনেক পরিবেশ সচেতন মানুষও তাই ডিজেল, পেট্রোল কিংবা জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ির নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন, করেন হরেক সমালোচনা।

আর সেই আলাপের মাঝেই সামনে আসছে সবুজ জ্বালানির প্রসঙ্গ। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাহাত্ম্য নিয়েও চলছে বিস্তর আলাপ। সেই সুযোগে পরিবেশবান্ধব প্রচারে নেমে ইলেকট্রিক গাড়ি (ইভি) বাজারে আনছে টেসলার মতো অনেক কোম্পানি। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ থেকে সচেতন নাগরিকদের অনেকেই বিদ্যুৎচালিত এই বাহনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
তবে এর মাঝখানের ভয়ংকর দিকটার কথা কেউ বলেন না। রয়ে গেছে একটা চরম শুভংকরের ফাঁকি।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজেল চালিত গাড়িতে কার্বনের পরিমাণ ২.৬৮ কেজি প্রতি লিটার। যেখানে পেট্রল ইঞ্জিনে ২.৩১ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড প্রতি লিটারে। সেই পরিসংখ্যানে দাঁড়িয়ে অনেকেই বিদ্যুৎচালিত গাড়িকেই বিকল্প হিসেবে নেওয়ার কথা বলছেন।

তবে শুরুতেই বড় অঘটনটা ঘটায় বৈদ্যুতিক গাড়ি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভক্সওয়াগন গল্ফ গাড়ি উৎপাদন করতে ৬.৮ টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন হয়। বিপরীতে একটি আধুনিক ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রিক গাড়ি (পোলস্টার ২) উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রায় ২৬ টন কার্বন নির্গমন হয়। একটি ক্লাসিক গাড়িকে এই পরিমাণ কার্বন নির্গমন করতে ৪৬ বছর ধরে চলতে হবে।

আর একটা গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে প্রায় ৪ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ঘটে। এক টন লিথিয়াম থেকে প্রায় ১০০ গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করা যায়। আবার এই এক টন লিথিয়াম আহরণ করে ব্যবহার্য করার জন্য প্রায় ২ মিলিয়ন টন পানির প্রয়োজন হয়। আর তাই ব্যাটারি গাড়ি নির্মাণ কাজে পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মোটেও পরিবেশবান্ধব নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পানির মূল্য ধরা হয় না, আর না ধরা হলেও তা যদি পেট্রোলিয়াম বা অন্য যে কোনো উপকরণের মতন করে ধরা হতো তবে ব্যাটারি তথা ব্যাটারি গাড়ি তৈরির ব্যয়ের আসল চিত্র উঠে আসতো।

এরপরে আছে আরো একটা ভয়াবহ হিসেব। ব্যাটারি গাড়ির জনপ্রিয়তা যে সব দেশে বেশি সেসব দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা, কার্যকারিতা এবং অর্থনৈতিক দৃঢ়তা বেশির ভাগ দেশের থেকে বেশি। বিদ্যুতের উৎপাদন একটা বড় ব্যাপার এখানে। যদি তাপবিদ্যুৎ হয় আর তার জ্বালানি যদি হয় জীবাশ্ম তবেও তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির। ক্লিন এনার্জির উদাহরণ হিসেবে যে দেশগুলোকে দেখানো হয় সে দেশগুলোর জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। যদি ভারতের উদাহরণ আনা হয়, তবে ভারতের মোট উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে তাপবিদ্যুৎ থেকে আর যার মূল জ্বালানি কয়লা। আর এই কাজে ভারত তার মোট কার্বন নিঃসরণের ৬০ শতাংশ আসে এনার্জি উৎপাদন থেকে। এই উদাহরণে আমরা বাংলাদেশের নামও আনতে পারি। কেননা বাংলাদেশে মোট ব্যাটারিচালিত গাড়ির পরিসংখ্যান জানা নেই। কিন্তু মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহ ভাগ তাপবিদ্যুৎ নির্ভর।  

এছাড়াও তেল, গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সেখানেও আছে কার্বন নিঃসরণের ভয়াবহ চিত্র। অন্যদিকে পারমাণবিক কেন্দ্রও নানাভাবে পরিবেশকে দূষিত করে। তাই বিদ্যুৎচালিত গাড়িকে যতোটা নিরাপদভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে আসলে বাস্তবতা তেমনটা নয়। যে পরিবেশবান্ধবের গল্পটুকু এই বাহন সম্পর্কে শোনানো হয় তা কেবল আইস বার্গের চূড়া। বাস্তবতা হচ্ছে ডিজেল কিংবা পেট্রোল কারের মতো সরাসরি নয় একটু রেখেঢেকে অথচ বাস্তবে প্রায় একইরকম ক্ষতি করছে এই কথিত পরিবেশবান্ধব গাড়ি। ক্রেতাদের একরকম বোকা বানানো হচ্ছে পেছনের গল্পটা আড়াল করে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে নেওয়া