বেলকুচিতে নৌকা ডোবাতে স্বতন্ত্রে একাট্টা আওয়ামী লীগ

বেলকুচিতে নৌকা ডোবাতে স্বতন্ত্রে একাট্টা আওয়ামী লীগ

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে একমাত্র সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী-এনায়েতপুর) আসনেই হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনী লড়াই হবে। আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল। মমিন মন্ডলের নৌকাকে ডোবাতে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেকমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ঈগলের পক্ষে একাট্টা হয়েছে উপজেলা-পৌরসভা, ইউনিয়নসহ তৃণমূল আওয়ামী লীগ।

শুধু তাই নয়, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি ও মনোনয়ন বঞ্চিতরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে আটঘাট বেঁধে ঈগলকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে।

জানা যায়, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনটি বেলকুচি-চৌহালী ও এনায়েতপুর থানার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পুরুষ ২লাখ ৪ হাজার ৩৮১জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ জন।

ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১২৪টি। আসনটিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনএম ও কৃষকশ্রমিক জনতালীগের চারজন ও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মমিন মন্ডলের নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ঈগলের মধ্যেই তুমুল লড়াই হবে। অন্যান্য প্রার্থীর প্রচারণা কম থাকলেও নৌকা ও ঈগলের প্রচারণায় মুখর নির্বাচনী এলাকা।

আসনটিতে আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে সমর্থন জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসসহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। চৌহালী উপজেলার অন্তত ৫০টির বেশি ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদক ঈগলের পক্ষে কাজ করছে।

অন্যদিকে চৌহালী উপজেলার ৩জন ইউপি চেয়ারম্যান নৌকার পক্ষে থাকলেও বাকি ৩ জন কাজ করছেন ঈগলের পক্ষে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজ উদ্দিনসহ দলের ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক শুধু নৌকার পক্ষে কাজ করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।

বেলকুচি উপজেলার সদ্য পদত্যাগকারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল, পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন ও রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর জানান, আব্দুল মমিন মন্ডল ও তার বাবা মরহুম আব্দুল মজিদ মন্ডল বিগত ১০ বছর এমপি ছিল অথচ সারাদেশে উন্নয়ন হলেও বেলকুচিতে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেনি। এমনকি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সাথে কোনো সমন্বয় করেনি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কোনো বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নির্বাচনী এলাকায় ভেটেরিনারি কলেজ, মৎস্য ডিপ্লোমা, বেলকুচি-সিরাজগঞ্জ টু-লেন রাস্তাসহ বেলকুচি-চৌহালীতে যত উন্নয়ন হয়েছে তা সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসের হাত ধরেই হয়েছে। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি ইউনিয়নগুলোতে ব্যাপক বরাদ্দ দিয়েছেন।

এজন্য প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বররা একাট্টা হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি গাজী লুৎফর রহমান মাখন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, প্রায় দুই বছর আগে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সন্মেলনে শুধু সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। সভাপতি মমিন মন্ডলের অসহযোগিতার কারণে আজও দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে দলের অধিকাংশ সাবেক নেতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। দলের অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

বেলকুচি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মির্জা শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, কমিটির ৬৯ জন নেতার মধ্যে ৫৬ জন ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।

বেলকুচি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শ্রী গোপাল চন্দ্র প্রামানিক ও সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, লতিফ বিশ্বাস এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছেন, আর মমিন মন্ডল হাইব্রিড ও নব্য আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই সংগঠনের ৭৫ জনের মধ্যে ৬৫ জন নেতা একজোট হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছি। দল বাঁচাতে হলে লতিফ বিশ্বাসকে জেতাতে হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস বলেন, দলের সভানেত্রী ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে সমস্যা নেই। তাই দলকে সুসংগঠিত এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে সমর্থন দিয়েছি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলছেন, অদৃশ্য কারণে দলের মনোনয়ন পাইনি। প্রধানমন্ত্রী সুযোগ করে দিয়েছেন, তাই জনগণের ভালোবাসা ও তাদের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছি বলেই উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে শতকরা ৮৫ ভাগ নেতাকর্মী আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আশা করছি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার ঈগল প্রতীক শতভাগ বিজয় লাভ করবে।

নৌকা প্রার্থীর আব্দুল মমিন মন্ডল বলছেন, দলের একটি অংশ সুবিধা ভোগ করার জন্য সারাজীবন বিপক্ষে থাকবে। এ কারণে তারা লতিফ বিশ্বাসের সাথে আছেন। আওয়ামী লীগের মার্কা নৌকা, শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা। যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ করেন নৌকার সাথে রয়েছেন। আশা করছি ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে তারা উচিত জবাব পাবে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক