যে কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ

একসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

যে কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ

অনলাইন ডেস্ক

আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকা গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন বয়কটের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) অন্যান্য বিরোধী দলগুলো দাবি তুলেছিল নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য, যা হাসিনা মেনে নেননি। তাই বিরোধী দলগুলো শেখ হাসিনার অধীনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট করেছে।

ভারতের জন্য বাংলাদেশ শুধু প্রতিবেশী দেশই নয় বরং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মিত্র এবং সঙ্গী। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স বা সাতটি রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশকে ভারতের দরকার। তাই, ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দলকে ক্ষমতায় দেখতে চান। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং একারণেই ভারত সরকার কর্তৃক তাকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা নয়।

শেখ হাসিনা সবসময়ই ভারতের সাথে তার দলের সম্পর্কের পক্ষে যুক্তি দিয়ে এসেছেন। ২০২২ সালে ভারত ভ্রমনের সময় তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বিস্মৃত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগ এবং ভারত সরকারের এই সম্পর্কের কঠোর সমালোচনা করে এসেছে বিরোধী দল বিএনপি। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দলটির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের সরকারকে সমর্থন করা, কোনো নির্দিষ্ট দলকে নয়। সমস্যা হচ্ছে ভারতের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র চান না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চাওয়ার মাধ্যমে এবং ডামি নির্বাচনকে সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত রিজভীর অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিবিসিকে তিনি বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের ভালো বন্ধু হিসেবে আমরা সেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চাই।

তবে, ২০০১-২০০৬ সময়কালের মতো আবারও বাংলাদেশের ক্ষমতায় বিএনপি-জামায়াতের আসার মধ্য দিয়ে দেশটিতে ইসলামপন্থীদের উত্থান দেখতে চায় না ভারত। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, শেষ যেবার বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেছিল তখন অনেকগুলো জিহাদি গ্রুপের উত্থান হয়েছিলো, শেখ হাসিনার ওপরে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, অস্ত্রবোঝাই দশটি ট্রাক ধরা পড়েছিল।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সশস্ত্র গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা ভারতের আনুকূল্য অর্জন করেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্যের জন্য বাংলাদেশ ভারতের ওপরে নির্ভর করে। তাই, রান্নাঘর থেকে ব্যালট পেপার পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভারতের গুরুত্ব অনেক বেশি।

তবে, বিগত সময়ে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির হিস্যা এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের মতো বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্কেই টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, বাংলাদেশে ভারতের ইমেজ সংকট রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে তারা ভারতের কাছ থেকে তারা ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না।

ভারত যদিও সেভেন সিস্টার্সে প্রবেশের জন্য স্থল, রেল এবং আকাশপথে অনুমতি পেয়েছে, বাংলাদেশ এখনও ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল এবং ভুটানের সাথে বাণিজ্য করার অনুমতি পায়নি।  

বাংলাদেশে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার চাওয়ার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে।

সেভেন সিস্টার্সে যাওয়ার জন্য ভারতের কাছে এই মুহূর্তে একমাত্র উপায় হচ্ছে বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানের মধ্যবর্তী ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থল করিডর ‘চিকেনস নেক’ ব্যবহার করা, যা চীনের সাথে সংঘাতের ফলে যেকোন সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাইলেও ভারত এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এসেছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে চীনের দ্রুত প্রভাব বিস্তার ভারতের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়েছে।

পিনাক রঞ্জন বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝিয়েছি আপনারা যদি শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দেন তাহলে তিনি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বেন। এটি ভারতের জন্য কৌশলগত সমস্যার সৃষ্টি করবে, যা আমরা হতে দিতে পারি না।

বাংলাদেশের ক্ষমতায় শেখ হাসিনার উপস্থিতিই যে ভারতের স্বার্থের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সে ব্যাপারে ভারত সরকার সুনিশ্চিত। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কিভাবে ভারত সরকার বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন আদায় করবে সেটি।

সূত্রঃ বিবিসি

news24bd.tv/ab