রূপগঞ্জে পদে পদে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন এমপি গাজী

রূপগঞ্জে পদে পদে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন এমপি গাজী

অনলাইন ডেস্ক

নির্বাচনী আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের প্রার্থী, বর্তমান সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া আচরণবিধি কোনো অবস্থাতেই মানছেন না। পদে পদে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন গাজী।

 

বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করেন গোলাম দস্তগীর গাজী। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা। জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজীসহ তার অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা।

এদিন দুপুর ২টায় মুড়াপাড়া রুপসী সড়কে কয়েকশ’ গাড়ি রাস্তা দাঁড়িয়ে রেখে নির্বাচনী জনসভা করেন মন্ত্রী গাজী।

দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। ফলে সাধারণ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বিকেলে গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার স্ত্রী তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী মঞ্চে হাজির হন। নির্বাচনের নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি পদের দায়িত্বে থাকা কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী, মেয়র নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার নীতিমালা নেই। সেই নীতিমালাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেয়র হাসিনা গাজী প্রায় সময়ই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তার ছেলে গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা ঈগল পাখি প্রতীক নিয়ে সংসদ হিসেবে নির্বাচন করলেও বাস্তবে তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন প্রকাশ্যে। এমনকি কিছু বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে পাপ্পা প্রকাশ্যে তার বাবা গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, মূলত গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে বাপ্পা প্রার্থী হয়ে ভোটকেন্দ্রে নিজের কোটায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের এজেন্ট বানিয়ে ভোট কারচুপি করতে চান। তাছাড়া বাবা যেখানে জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন সেখানে তাদের মধ্যে কোনো রকম বিরোধ না থাকা সত্ত্বেও একই আসনে ছেলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এটা শুধু সন্ত্রাসীদের ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বৈধ পন্থায় ঢুকতে দিয়ে ব্যালট ছিনতাইয়ের আয়োজন করার পাঁয়তারা।

পথচারী আসমা আক্তার বলেন, আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য মুড়াপাড়া সড়ক দিয়ে তিনজন ছেলে-মেয়েসহ প্রায় দুই ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েছিলাম। পরে অনেক কষ্টে পায়ে হেঁটে বাড়িতে যাই।  

রিকশাচালক আলমাছ আলী জানান, আমি রুপসী থেকে মুড়াপাড়া যাওয়ার জন্য দুইজন যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হওয়ার পর একঘণ্টা যানজটে বসেছিলাম। পরে যাত্রীরা রিকশা থেকে নেমে পায়ে হেঁটে চলে যেতে বাধ্য হন।

এছাড়া প্রতিনিয়ত রূপগঞ্জের প্রতিটি রাস্তায় গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্বাচনী প্রচারণায় দুই থেকে আড়াই শ’ মোটরসাইকেল ও ২০ থেকে ২৫টি মাইক্রোবাস নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে অংশ নিচ্ছে। এসব মোটরসাইকেলে রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও থানার বেশ কিছু মামলার আসামি দাগি সন্ত্রাসীরাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গাজীর সমর্থকরা প্রকাশ্যে লিফলেটের সঙ্গে ভোটারদের অর্থ দিয়ে ভোট কিনে নিচ্ছে। স্বল্প শিক্ষিত ও গ্রামের নিরক্ষর মানুষের দুর্বলতার সুযোগ বুঝে নগদ অর্থ দিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা খর্ব করছে। যা নির্বাচন আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্বাচনী প্রচার মাইকে ভোট চেয়ে মাইকিং না করে বরং গাজীকে ভোট না দিলে নির্বাচনের পর এলাকার ভোটারদের গ্রাম ছাড়া করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে তার সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে রাতের বেলায় এভাবে মাইকিংয়ের ঘটনা এলাকার সাধারণ ভোটারদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে।

এভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ধরে একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া, তৃণমূল-বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম একাধিকবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাস্তা অবরোধ করে সভা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক