'আমার কোলে আমার ছোট বাচ্চা ছিল। কোল থেকে বাচ্চাকে ফেলে দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি বাড়ির বাহিরে একটি গাছ জড়িয়ে ধরে রাখলে সেভাবেই আমাকে মারধর শুরু করে। আমি চিৎকার করতে থাকলেও তারা থামেনি।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে নাটোর শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ঈগল প্রতীক) সমর্থক মো. সোহাগ হোসেন।
সোহাগ বলেন, গতকাল রাতে আমাদের এলাকায় আসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিক। আমি শুধু তার সাথে সঙ্গ দিয়েছিলাম। পরে রাত ১টার দিকে আমার বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন লোক।
তিনি বলেন, মারধরের পর আমাকে তারা (দূর্বৃত্তরা) বলেছে নির্বাচনের আগে বাড়িতে না আসতে। এখন আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
সোহাগ সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের সারদানগর গ্রামের বাসিন্দা।
নাটোর ট্রমা সেন্টারের অর্থোপেডিক চিকিৎসক ডা. তারিকুল ইসলাম জানান, দুপুরে পায়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সোহাগ নামে একজন এসেছিলেন। তার পায়ে লাঠি বা ওই জাতীয় শক্ত বস্তু দ্বারা আঘাতের কারনে তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। পরে এক্স-রে করে ১৫ দিনের জন্য পায়ের ওই স্থানে প্লাস্টার করা হয়েছে।
তবে শুধু সোহাগ নয় বরং গতকাল রাতে এমন অন্তত দশজনকে মারধর ও বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের সমর্থকরা- এমনটাই অভিযোগ ওই আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের।
শফিকুল ইসলাম শফিক অভিযোগ করে বলেন, সোহাগ ওই গ্রামে আমার গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। তাকে দরজা ভেঙে কোলে থাকা বাচ্চাকে ফেলে দিয়ে বাহিরে নিয়ে এসে বেধড়ক পিটিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। সে বর্তমানে নাটোর শহরের একটি হাসপাতালে রয়েছে।
শফিক বলেন, রাত ১২টার দিকে চৌগ্রাম ইউনিয়নের বড়ীয়া গ্রামে আমার সমর্থক জিয়ারুল ও হাসানকে পিটিয়ে সিংড়া থেকে চলে যেতে বলে নৌকার সমর্থকরা। তারা রাতেই ঢাকা চলে গেছে। রাত ১১টার দিকে তেরোবাড়িয়া গ্রামে সাজ্জাদ হোসেনের বাড়িতে ঘরে ঢুকে তাকে খুঁজে এসেছে নৌকার সমর্থকরা। সে ভয়ে বাড়িতে যাচ্ছে না।
শফিক আরও বলেন, শেরকোল ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রামে মোহাইমিনুল নামে আমার একজন কর্মীকে মারধর করেছে নৌকার সমর্থকরা। গতকাল রাতেই অন্তত দশজনকে পিটিয়ে ও হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে।
শফিক আরও বলেন, গতকাল প্রতিমন্ত্রী তার সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে বসার পরে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা কেউ অভিযোগ দিতে সাহস করছে না। তাই প্রার্থী হিসেবে আমি নিজেই অভিযোগ দিবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেন, এইসব হামলার বিষয়ে আমি কিছু শুনিনি। আগামী ৭ তারিখে সিংড়ার জনগণ বিপুল পরিমাণ ভোট দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করবেন। তাই আমাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে চাপ প্রয়োগের দরকার নেই, অনিয়ম করারও দরকার নেই। আমরা কর্ম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছি।
এ বিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম বলেন, এই খবরগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেয়ে পুলিশ ওই সব এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। তবে ভুক্তভোগী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী এসব ঘটনায় এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। থানা খোলা রয়েছে। আমরা ঘটনাগুলো যাচাই করে দেখছি।
news24bd.tv/ab