গাজীর ক্যাডারদের বাড়িতে অস্ত্র মজুদের অভিযোগ

সংগৃহীত ছবি

গাজীর ক্যাডারদের বাড়িতে অস্ত্র মজুদের অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সয়লাব অবস্থা। এরইমধ্যে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর চিহ্নিত ক্যাডারদের বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভোটে ব্যাপক কারচুপি হতে পারে। এতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সরকারের যে অঙ্গীকার, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

আসনের একাধিক প্রার্থী বলেছেন, রূপগঞ্জের দুই পৌরসভা তারাব ও কাঞ্চন এবং উপজেলায় অবস্থিত বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যক্তিগত অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করা স্থানীয় সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে গোটা রূপগঞ্জবাসী। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে গেল ১৫ বছরের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে চায় তারা।

স্থানীয়রা বলেন, মাঠের পরিস্থিতি টের পেয়ে হুমকি-ধমকি শুরু করে দিয়েছে গাজীর ক্যাডার বাহিনী।

তার দীর্ঘদিনের পালিত সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীচক্রের সদস্যরা এরই মধ্যে নিজেদের বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র মজুদ করা শুরু করেছে, যাতে ভোটের দিন এবং তার আগ মুহূর্তে সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করা যায়।

সাধারণ ভোটাররা আশঙ্কা করেন, গাজী নির্বাচনে হেরে গেলে তাদের সন্ত্রাসী রাজত্ব ভেঙে পড়বে। এ কারণে তারা অবৈধ অস্ত্র উঁচিয়ে ভোটারদের ওপর হামলে পড়েছে। এতেও যখন ভোটারদের গাজীবিরোধী গণজোয়ার থামানো যাচ্ছে না, তখন সর্বশক্তি নিয়োগ করে ভোটকেন্দ্র দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।

এ কারণে  রূপগঞ্জের বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত মানুষ ভোট কেন্দ্রমুখী থাকলেও গোলাম দস্তগীর গাজীর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধমকির মুখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন সাধারণ ভোটাররা। এভাবে চলতে থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীকে অংশ নেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে পুরো ভোটপ্রক্রিয়া বানচাল হবে। এখনই গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীদের থামাতে না পারলে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছে।

সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে আহত করেছে। আমার নির্বাচনী কাজে অংশ নেওয়া বেশ কিছু নারী কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মারধর করে আহত করা হয়েছে। এসব ঘটনা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরও দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয়নি সন্ত্রাসীদের। রূপগঞ্জসহ আশপাশের থানায় এসব সন্ত্রাসীর নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে। ’

একই আশঙ্কা করে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ‘ভোটাররা ভোট দিতে এলে হেরে যাবে ভয়ে গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা ভোটারদের ভোট বিমুখ করছে। তারা যাতে ভোটকেন্দ্রে না আসে সে জন্য প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। গোলাম দস্তগীর গাজীবিরোধী নির্বাচনী প্রচারণা করলেই রাতের আঁধারে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার বেশ কিছু ক্যাম্পেইনারকে মারধর করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার প্রশ্ন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর এসব সন্ত্রাসী কি আইনের ঊর্ধ্বে?’

অনুসন্ধান বলছে, রূপগঞ্জের বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের আশপাশে গোলাম দস্তগীর গাজী সমর্থিত সন্ত্রাসীদের বাড়িতে বাড়িতে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাউন্ড গ্রেনেড ও ককটেল তৈরি করা হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা বলেন। রূপগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন সংখ্যা সাতটি, পৌরসভা রয়েছে আরো দুটি। আসনটিতে ভোটারসংখ্যা দুই লাখ ৭৪ হাজার ৭০৭। কাঞ্চন পৌরসভার ওয়ার্ডসংখ্যা ৯টি।

এর মধ্যে তাড়াইল নামের ভোটকেন্দ্রটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গাজীর সহযোগী প্যানেল মেয়র পনির হোসেন তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের গাজীর পক্ষে কাজ করতে চাপ দিচ্ছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, তার কারণে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন ভোটাররা। কেন্দুয়া সলিম উদ্দিন চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ ও কেন্দুয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ বলছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে স্থানীয় সন্ত্রাসী মোহাম্মদ আবুল ওরফে বোমা আবুল। এই বোমা আবুলের বিরুদ্ধে রয়েছে ১০টির বেশি মামলা। যার মধ্যে চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক ও হত্যা মামলা রয়েছে। এদিকে কেন্দুয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি এমায়েত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ভূমিদস্যুতা ছাড়াও নানা রকম অপরাধের অভিযোগ আছে। কাঞ্চনের কেন্দুয়াপাড়া ওয়ার্ডে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাসুল কলি। সে তার কলি বাহিনী নিয়ে এলাকায় ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে।

কাঞ্চন পৌরসভার একজন বাসিন্দা আব্দুল মতিন। তিনি জানিয়েছেন, গাজীকে ভোট দেওয়ার জন্য তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে চাপ দিচ্ছেন। ভোটের পর ৮ তারিখ থেকে এলাকায় গাজীবিরোধী ভোটারদের থাকতে দেওয়া হবে না বলে প্রচার করা হচ্ছে। সাব্বির হোসেন ইমন নামের এক ভোটার জানিয়েছেন, প্রাইভেট নম্বর থেকে মন্ত্রীর এপিএস পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে হুমকি দিয়েছে। কলাতলীর ত্রাস হিসেবে পরিচিত কমিশনার আইয়ুব খান। গাজীর এই সহযোগীর নামে রয়েছে পাঁচটি মামলা। এর মধ্যে জমি দখল ও লুটপাট উল্লেখযোগ্য। এই কমিশনারও গাজীর হয়ে ভোটারদের চাপ দিচ্ছেন।

কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি সাবেক চেয়ারম্যান রকিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিকের নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা করছে এলাকাবাসী। চনপাড়া বস্তির নবকিশালয় উচ্চ বিদ্যালয়সহ তিনটি কেন্দ্র মেম্বার শমশের ও তার সহযোগী সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে দখলের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি ওমর ফারুকের নেতৃত্বে দখলের পরিকল্পনা রয়েছে। কায়েতপাড়ার পূর্বগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি কায়েদপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদ আলীর নেতৃত্বে দখলের পরিকল্পনা চলছে। তারাব পৌরসভার রূপসী নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি গোলাম দস্তগীর গাজীর নিজ বাড়ির ভোটকেন্দ্র। এখানে নিজের মতো করে ভোট মেরে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। গন্দবপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি কমিশনার মনির হোসেনের নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির শঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি কমিশনার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে দখলে রাখা হবে। তারাব দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি যুবলীগ নেতা আকবর বাদশা ও নজরুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হবে। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিজের প্রতিকূলে বুঝতে পারলে বরপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি করে ভোট কারচুপির পরিকল্পান করছেন। এছাড়া দিঘী বরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারাব পাট গবেষণা কেন্দ্র, খাদুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌকুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের নেতৃত্বে দখলের পরিকল্পনা রয়েছে গোলাম দস্তগীর গাজীর।

এদিকে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ইউসুফগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা ও তার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম ফটিক এবং আনসার আলীর নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। জাহাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মাসুম চৌধুরী অপুর নেতৃত্বে দখলের পরিকল্পনা চলছে। জনতা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি রূপগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে দখল করে ব্যালট জালিয়াতি করার পরিকল্পনা রয়েছে। আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগ নেতা জিলানী ভাণ্ডারীর নেতৃত্বে দখলের পরিকল্পনা করেছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। এলাকার সাধারণ ভোটারদের দাবি, এসব কেন্দ্রে বেশি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে ভোটের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে বিতর্কিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

news24bd.tv/SHS