অটোচালক থেকে আইপিএস, 'টুয়েলভথ ফেল' সিনেমার আসল কাহিনি জানেন কি? 

অটোচালক থেকে আইপিএস, 'টুয়েলভথ ফেল' সিনেমার আসল কাহিনি জানেন কি? 

অনলাইন ডেস্ক

পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়ার তৈরি 'টুয়েলভথ ফেল' সিনেমাটি রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে ভারতে। প্রথমে বক্স অফিসে ধীরগতি থাকলেও এখন বক্স অফিসেও ভালোই ব্যবসা করছে সিনেমাটি। বিক্রান্ত ম্যাসি অভিনীত সিনেমাটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছে। লেখক অনুরাগ পাঠকের জনপ্রিয় উপন্যাস 'টুয়েলভথ ফেল'-এর গল্প অবলম্বনে তৈরি এই সিনেমাটি রিয়েল লাইফ আইপিএস অফিসার মনোজ কুমারের জীবনকাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত।

দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি রিয়েল লাইফ মনোজ শর্মা। বাড়ি ছাড়ার পর রাত কাটিয়েছিলেন ফুটপাথে। এক ধনীর বাড়িতে পোষ্য সারমেয়র দেখভাল থেকে শুরু করে অটো চালক হিসেবেও কাজ করেন এই আইপিএস অফিসার। তাঁর জীবনে ছিল লড়াইয়ের ময়দান না ছাড়া এক নাছোড় জেদ।

কীভাবে পাশ করেন ভারতের অন্যতম কঠিন চাকরির পরীক্ষা ইউপিএসসি?

তবে একবারে পারেননি। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় বারবার হোঁচট খেয়েছেন মনোজ শর্মা। কিন্তু, কখনও হাল ছাড়েননি তিনি। তাঁর জীবনের অন্যতম মন্ত্র ছিল, 'জিততে গেলে লড়তে হবে। হারা ওহি জো লড়া নহি। ' এই মূলমন্ত্রকে সহায় করেই সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসেন তিনি।

ভারতের মধ্য প্রদেশের মোরেনায় জন্মগ্রহণ করেন মনোজ শর্মা। ছেলেবেলা থেকে তিনি ছিলেন মিডিওকার। কোনদিনই ক্লাসে আহামরি রেজাল্ট করতে পারেননি। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় কোনমতে তৃতীয় বিভাগে পাশ করেন। শুনতে অবাক লাগলেও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে হিন্দি ছাড়া সমস্ত বিষয়ে ফেল করেন তিনি। কোনদিন বড় কোনও স্বপ্নও দেখেননি এই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটি।

দ্বাদশে ফেল করায় পেলেন না ভালো কোনও চাকরিও। ফলে শেষ পর্যন্ত পেট চালাতে অটো চালাতে শুরু করেন মনোজ। আর এই তিনচাকার যানই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।

একবার এক পুলিশ মনোজ শর্মার অটোটিকে আটক করেন। মহকুমা শাসকের অফিস থেকে অটোটিকে ছাড়িয়ে আনতে পৌঁছান তিনি। এই একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তাঁর জীবন। অটো ছাড়ানোর কথা বলতে বলতেই শুরু হয় জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা। কীভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসা যায়, কীভাবে তার প্রস্তুতি নিতে হয় সবটাই ওই আলোচনায় উঠে আসে। মহকুমা শাসক যেন রাতারাতি তাঁর জীবনের গতিপথ বদেল দিয়েছিলেন সেদিন।

ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়। পাড়ি দেন গোয়ালিয়র। প্রথমটায় টেম্পো চালিয়ে, ছোট-খাটো কাজ করে লড়াই শুরু করেন তিনি। সে সময় তাঁর মাথার উপর ছাদটুকুও ছিল না। ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে শুতে হয়েছে মনোজকে। একটা সময় লাইব্রেরিতে পিয়নের কাজ পান তিনি। কাজের সূত্রে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সেটাই তাঁকে নতুন দিশা দেখান। ধীরে ধীরে ইউপিএসসি-র জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।

এরপর গোয়ালিয়র থেকে সোজা চলে যান দিল্লিতে। শোনা যায়, সেখানে ধনী পরিবারের কুকুরদের দেখভালের মতো কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। তবে লড়াই বন্ধ হয়নি। এই লড়াইয়ের যাত্রায় তাঁর সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধা। পরবর্তীতে তিনিই মনোজ শর্মাকে বিয়ে করেন।  

ইউপিএসসি পরীক্ষায় তিনবার ব্যর্থ হন মনোজ শর্মা। শেষ পর্যন্ত চতুর্থবারে ১২১ ব়্যাংক করেন তিনি। আইপিএস হয়ে মহারাষ্ট্রে কাজে যোগ দেন।

আইপিএস মনোজ কুমার শর্মার বন্ধু অনুরাগ পাঠক তাঁর বই 'টুয়েলফথ ফেইল, হারা ওহি জো লড়া নেহি’-তে এই লড়াইয়ের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। সেটি থেকেই টুয়েলফথ ফেইল সিনেমাটি অনুপ্রাণিত।

‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমায় মনোজ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত ম্যাসি এবং শ্রদ্ধা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেত্রী মেধা শংকর।

news24bd.tv/TR    

এই রকম আরও টপিক