যেভাবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছেন

সংগৃহীত ছবি

যেভাবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছেন

অনলাইন ডেস্ক

রোববার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এবং সমালোচকদের ওপরে নিয়ন্ত্রণের ফলে এই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা চতুর্থবারের মতো জয় প্রায় সুনিশ্চিত।

বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি। যদি দেশটিতে কর্মরত উন্নয়নকর্মীদের জিজ্ঞেস করা হয় যে কে এই উন্নয়নের জন্য দায়ী তবে উত্তর একটাই আসে আর সেটি হচ্ছে- শেখ হাসিনা।

৭৬ বছর বয়সী হাসিনা গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন, যা তাকে পৃথিবীর দীর্ঘতম নির্বাচিত নারী রাষ্ট্রপ্রধানে পরিণত করেছে। সবাই মনে করছেন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে হাসিনা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসবেন, এবং এর পেছনে কারণ হিসেবে তার নিজস্ব জনপ্রিয়তা, বিরোধী দলসমূহের নির্বাচন বয়কট এবং সমালোচকদের কন্ঠরোধকে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৯০ সালে সামরিক শাসক এরশাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি জিরো সাম গেইমের সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন যুগ ধরে শেখ হাসিনার সাথে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রধান খালেদা জিয়ার তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই দুই নারী ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়কালে বাংলাদেশের রাজনীতি সহিংসতা, অবিশ্বাস এবং সন্দেহ দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। শেখ হাসিনার ওপরে বেশ কয়েকবার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই বিরোধী দলে থাকার সময়ে সরকারের পক্ষ হতে হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছে।

২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেন। বিএনপির মতে, শেখ হাসিনার অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে, এবং ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠানো হয় এবং বর্তমানে তিনি নিজ গৃহে বন্দী আছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৭টি আসন লাভ করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে ২০২২ সালে সংসদ ত্যাগ করে। এর বিপরীতে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ২০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল এবং বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করছে বলে মন্তব্য করেছেন।

নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তারা সকলেই আওয়ামী লীগের মিত্র। নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী প্রার্থী এমনভাবে বাছাই করা হয়েছে যাতে আওয়ামী লীগ সব জায়গায় না জেতে এবং সংসদে একটি বিরোধী দল থাকে।

শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস হচ্ছে তিনি যেকোনো হুমকিকে সাহসের সাথে মোকাবিলা করেন। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বললো তারা গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টিকারী কাউকে ভিসা দেবে না তখন শেখ হাসিনা বললেন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিরোধী দলের সাথে হাত মেলানোর অভিযোগও এনেছেন।

২০১৪ সালের নির্বাচন রক্তপাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় এবং নাস্তিক ব্লগারদের ওপরে জিহাদি আক্রমণ চালানো হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল যখন সন্ত্রাসীরা গুলশানের একটি বেকারিতে ১৭ জন বিদেশী নাগরিকসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করেছিল।

এই ঘটনাগুলোর পর থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে জোরদার করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এই কারণেই ভারত বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ এবং মধ্যমপন্থার অনুসারী, যেখানে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক জোটে অনেক ইসলামী দলকে যুক্ত করেছে। এরকম একটি দল হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ বাঙালীদের হত্যার সাথে জড়িত ছিল।

সন্ত্রাসবাদ ঠেকানোর জন্য ব্যবহৃত নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক বিপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে, গতিবিধি নজরদারী করা হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আওতায় সরকারকে সমালোচনা করলে যে কাউকে গ্রেপ্তার করার বিধান রাখা হয়েছে।

এসকল বিষয়ে মন্তব্য প্রদানের জন্য বিএনপির কাউকে খুঁজে পাওয়াটা খুবই কষ্টকর। তাছাড়া, বিএনপির নেতাকর্মীদের তাদের নিজেদের দল নিয়ে অনেক হতাশা রয়েছে। দলটির প্রধান খালেদা জিয়া গৃহবন্দী, তার ছেলে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশছাড়া। এমতাবস্থায় দলটির দেশব্যাপী গণআন্দোলন ব্যর্থ হতে চলেছে।

টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অতি সম্প্রতি শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা এক দেশ থেকে আরেক দেশে পরিবর্তিত হয়।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে এখানে ভোটের অধিকার এখন আর উদযাপন করার মতো কোনো বিষয় নয়। নির্বাচন এখন আর উৎসব নয়, ভোটের অধিকার মানুষের কাছে এখন আর কোনো গুরুত্ব বহন করে না।

এমনই পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন।

সূত্রঃ নেদারল্যান্ডের সংবাদপত্র ট্রু 

news24bd.tv/ab