বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নির্বাচনকে কিভাবে দেখছে 

ছবিটি বিবিসি’র সৌজন্যে

বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নির্বাচনকে কিভাবে দেখছে 

দেবদুলাল মুন্না

আজ  রোববার ( ৭ জানুয়ারি) দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভোটগ্রহণ চলছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি দল ভোট বর্জন করেছে। বিএনপির ডাকে হরতাল পালিত হচ্ছে।

 
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, গত কয়েকদিনের সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ আছে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের। রোববার ( ৭ জানুয়ারি)  সকালে টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ নির্বাচনকে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিভাবে দেখছে এটিও রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান নির্বাচনের দিন বলেছেন,‘ বিদেশিরা কি বলছে , এটা বিষয় নয়।
নির্বাচনের পর বিদেশিদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে। ’
ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হালকা-ভারী উভয়ভাবেই চাপ প্রয়োগ করেছে এবং এতদিন পর্যন্ত তাতে কোনো লাভ হয়নি। ফলে মার্কিন প্রশাসন নির্বাচনের পর কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। ’ সূত্র, উইলসন সেন্টারের ওয়েব সাইট।
কুগেলম্যান বলেন, এ ব্যবস্থাগুলো হবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। এতে বাংলাদেশ আয় করেছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।  
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ঝুঁকি হলো, দলটি মনে করতে পারে যে তারা যেভাবে খুশি সেভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে। এ ব্যবস্থা এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে যায় যেখানে কোনো জবাবদিহি থাকে না। ’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের শিরোনাম ‘নির্বাচনের দিকে বাংলাদেশের রুগ্‌ণ গণতন্ত্র, একতরফা পদক্ষেপ’। ওই প্রতিবেদনের শুরুটা করা হয়েছে এভাবে—বাংলাদেশে রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ কম। তবে দেশটিতে গণতন্ত্রের কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
গ্লোবাল ভয়েসের শিরোনাম হলো, একতরফা প্রতিযোগিতাহীনভাবে জয়ের পথে আওয়ামী লীগ। ’
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ‘শেখ হাসিনা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন মতে, আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশে পরাজিত হতে যাচ্ছে।
ব্লুমবার্গে ‘বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বর্জনের নির্বাচনে তাঁর ১৫ বছরের শাসনের মেয়াদ বাড়াতে চলেছেন। এখন প্রশ্ন হলো– মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সরকারগুলো দেশটিকে গণতান্ত্রিক অবনমনের জন্য শাস্তি এবং চীনের কাছাকাছি ঠেলে দেবে কিনা।
নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, সিএনএন, ব্লুমবার্গ, আলজাজিরা, গার্ডিয়ানের পাশাপাশি বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও এপির মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমগুলো একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে।  তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অনলাইন ভার্সন।  
গত কয়েকদিন বিবিসি একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদনটি হচ্ছে , ‘বাংলাদেশ ইলেকশন্স: মাই হাজব্যান্ড ডায়েড ইন জেল মান্থস বিফোর ভোট’।  
নির্বাচনের আগের দিন গত শনিবার( ৬ জানুয়ারি)  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে স্বামীহারা এক নারীর গল্প। ওই নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির একজন কর্মী ছিলেন তাঁর স্বামী। গত বছর তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মাত্র ২৬ দিন পরই তাঁর ছেলেকে ফোন করে জানানো হয়, তাঁর বাবা কারাগারে মারা গেছেন। ওই নারীর ভাষায়, ‘আমার সন্তানকে এখন কে বাবার ভালোবাসা দেবে?’
 
news24bd.tv/ডিডি