স্বতন্ত্রের কাছে পরাজয় হলো যেসব হেভিওয়েট প্রার্থীর

বাম থেকে হাসানুল হক ইনু, কাদের সিদ্দিকী, পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

স্বতন্ত্রের কাছে পরাজয় হলো যেসব হেভিওয়েট প্রার্থীর

অনলাইন ডেস্ক

শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। চলছে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গণনা। ইতিমধ্যে সারাদেশের সব কেন্দ্রের ফলাফল আসতে শুরু করেছে।  এর মধ্যে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর পরাজয় প্রায় নিশ্চিত।

এদের মধ্যে অনেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রের কাছে গেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। তবে এর মাঝেও চমক দেখিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নৌকা প্রতীক না পেয়েও দেশজুড়ে জয় লাভ করেছেন ষাটটিরও বেশি আসনে।

আর পরাজয়ের তালিকায় রয়েছেন হেভিওয়েট বেশ কয়েকজন প্রার্থীও।  

যেখানে আলোচিত নাম জাসদের হাসানুল হক ইনু। সাবেক এ তথ্যমন্ত্রী কুষ্টিয়া ২ আসন থেকে এবারও নৌকা প্রতীকে দাঁড়িয়েছিলেন। ট্রাক প্রতীকের কামরুল আরেফিনের কাছে ২৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

প্রথমবারের মতো আসন হাতছাড়া করেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও। জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান হওয়ার স্বত্তেও নৌকা প্রতীক নিয়ে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ নেতা মহিউদ্দীন মহারাজের কাছে।  

প্রথমবার হারের মুখ দেখেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। টাঙ্গাইল ৮ আসন থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত অনুপম শাহজাহান।

এদিকে এক বাদশাহ হেরে গেছেন আরেক বাদশাহর কাছে। রাজশাহী ২ সদরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা কাঁচি প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে বিরূদ্ধে।  

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আরেও একবার হেরে গেছেন নিক্সন চৌধুরির কাছে। ফরিদপুর ৪ আসন থেকে ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে ঈগল প্রতীক নিয়ে জয় লাভ করেছেন নিক্সন, টানা তৃতীয়বার।

হবিগঞ্জ ৪ আসনে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন প্রথমবারেই বাজিমাত করেছেন। ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রায় এক এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন সাবেক বিমান প্রতীমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ মাহবুব আলীকে 

অঘটনের শিকার আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। মাদারীপুর তিন আসন থেকে হেরে গেছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়াই করা তাহমিনা বেগম।

আওয়ামীলীগের ছেড়ে দেয়া ঢাকা ১৮ আসন থেকে ভরাডুবি হয়েছে জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরের। মাত্র ছয় হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন শেরীফা। এই আসন থেকে কেতলির খসরু চৌধুরী নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন।

মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে হেরেছেন তিনি।  

এবার নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলো ১১ কোটি ৯৭ লাখ। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২। মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি। ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।

ইসির দেওয়া তথ্যমতে, নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ২৯৯ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নির্বাচনে ২৮টি দল অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৫৩৪ জন এবং স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ২৬৬ জন প্রার্থী ছিল আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৫ জন প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী রয়েছেন ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসা তৃণমূল বিএনপি।

এদিকে বিএনপিসহ ৬০টি দল নির্বাচন বর্জন করেছে। দলটি সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে সফলতা না পেয়ে নির্বাচনের দুই মাস আগ থেকে হরতাল-অবরোধের পথ বেছে নেয়। এতে সরকারকে চাপে ফেলতে না পেরে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ ডাক দেয় দলটি। পাশাপাশি সরকারকে সকল প্রকার কর, খাজনা, পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল দেওয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায় দলটি।

news24bd.tv/aa