যে কারণে নির্বাচনে হেরে গেলেন গোলাপ

আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ।

যে কারণে নির্বাচনে হেরে গেলেন গোলাপ

মাদারীপুর প্রতিনিধি

আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। ছিলেন হেভিওয়েট প্রার্থী। মাদারীপুর-৩ আসনে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে শুরু হয় বিতর্ক।

নেতাকর্মীদের কাছে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এর জের ধরেই আওয়ামী লীগের ঘাটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে।

এই আসনে আওয়ামী লীগের আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তাহমিনা বেগম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে ঈগল প্রতীকে ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

জানা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনটি মাদারীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের স্থানীয় রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। রয়েছে আওয়ামী লীগের গ্রুপিং। একাংশের নেতৃত্ব দেন আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ, অপরাংশের নেতৃত্ব দেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম।

কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র তিনজন ছিলেন গোলাপের সাথে। এছাড়া, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতাকর্মীর সাথেই গোলাপের ভালো সম্পর্ক ছিলো না। যার কারনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তার সাথে জেলা আওয়ামী লীগ ও কোন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিলেন না।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে আমেরিকাতে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয় স্থানীয়দের মাঝে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ ২০১৮ সালে তার নির্বাচনী হলফনামায় মার্কিন নাগরিক হওয়ার তথ্য গোপন করেছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ ডলারে নয়টি বাড়ি কিনেন। সবশেষ ২০১৯ সালে তিনি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ১.১৮ মিলিয়ন ডলারে একটি সেমি-ডিটাচড বাড়ি কিনেছেন।

ওসিসিআরপি'র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটিতে লাইসেন্সবিহীন ট্যাক্সি চালানো, ফার্মেসি চেইন ওয়ালগ্রিনসের একটি শাখায় ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করা এবং পিজ্জা তৈরির মতো স্বল্প বেতনের নানা কাজ করেছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয় ভোটারদের মাঝে তার প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার বংশের এক লোক বলেন,গোলাপ তার নিজ গ্রাম রমজানপুরে অসংখ্য মানুষের জমি দখল করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তার জবাব ভোটের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে।

কালকিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন বলেন, টিআর এবং কাবিখাসহ বিভিন্ন সরকারী বরাদ্দে  এমপি গোলাপ ও তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগম ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। এইসব বিষয় উল্লেখ করে  বিভিন্ন অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে ৭০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পেশ করা হয়েছে।

কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়নি। পরাজিত হয়েছেন গোলাপ। তার বিভিন্ন অন্যায় ও অনিয়মের কারনে জনগন ফুঁসে উঠেছিল। তার জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছে। একারনেই হেরেছেন তিনি।

এসব বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার গ্রামের বাড়ি গিয়েও তার সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়নি।

news24bd.tv/ab