ইসলামি দলগুলোর কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন

ইসলামি দলগুলোর কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন

অনলাইন ডেস্ক

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের বড় ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন অংশগ্রহণ না করলেও সাতটি অংশ নিয়েছে। অংশ নেওয়া এসব ইসলামি দলের মোট প্রার্থী ছিল ২৭৬ জন। এর মধ্যে একজন প্রার্থীও জয়লাভ করেননি।

অংশগ্রহণকারী ইসলামি দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।

এর মধ্যে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী ছিল ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ৪২ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩৮ জন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন।

চট্টগ্রাম জেলাতেই তরিকতপন্থি চারটি ইসলামিক দলের চেয়ারম্যান-মহাসচিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচনে নতুন নিবন্ধিত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) বাদেও তরিকত ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান-মহাসচিবরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারিয়েছেন।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ জন।

আসনটিতে নয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নৌকা প্রতীকে এক লাখ ৬৮৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মো. আবু তৈয়ব তরমুজ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোট। এ আসনে ৩২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।

এর মধ্যে শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ একতারা প্রতীকে পান তিন হাজার ১৫১ ভোট। পাশাপাশি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ফুলের মালা প্রতীকে পান ২৩১ ভোট। ওই আসনে ভোট পড়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৫টি।

চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৮৫ হাজার ৮০১ জন। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ৫৯ হাজার ২৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

আসনটিতে ২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’র প্রার্থী দলটির মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর চেয়ার প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৫৬৫ ভোট। এ আসনে ভোট পড়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ১৩৪টি।

চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি দুই হাজার ১৫১ ভোট পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন মোমবাতি প্রতীকে আট হাজার ২৯৮ ভোট পেয়েছেন। হিসাব অনুযায়ী জামানত ফিরে পেতে এ আসনে তাকে ২১ হাজারের মতো ভোট পেতে হতো।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট’র মহাসচিব সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ মোমবাতি প্রতীকে পেয়েছেন পাঁচ হাজার ২৩১ ভোট। জামানত ফেরত পেতে বিজিত প্রার্থীকে কমপক্ষে ১৪ হাজার ৬৫৮ ভোট পেতে হবে।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দুটি দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে বটগাছ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পেয়েছেন ২ হাজার ৬৩৫ ভোট। দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ৪৭৩ ভোট পেয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিন কুমিল্লা-২ আসনে পেয়েছেন ২২২ ভোট।

ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে মিনার প্রতীকে ৯৯৪ ভোট পেয়েছেন। যুগ্ম মহাসচিব আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-২ আসনে ৯৪৪ ভোট পেয়েছেন। আরেক যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন ময়মনসিংহ-২ আসনে পেয়েছেন ১ হাজার ৭৫৩ ভোট।

দলটির অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে- মৌলভীবাজার-৪ আসনে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৮, নেত্রকোনা-২ আসনে মো. ইলিয়াস ৫ হাজার ২৮৪, গাজীপুর-১ আসনে ফজলুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৪৯৩ ও মৌলভীবাজার-২ আসনে আসলাম হোসাইন রহমানী পেয়েছেন ৩৬৬ ভোট।

ইসলামি দলগুলোর বাইরে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্রভাবে কয়েকজন আলেম এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে শুধু সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে নৌকাকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি ও ফুলতলীর পির মাওলানা মোহাম্মদ হুছাম উদ্দিন চৌধুরী।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ। হুছাম উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ৪৭ হাজার ১৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাসুক উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯৭৩ ভোট।

গত ৫ ডিসেম্বর হুছাম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ বৈঠকের পর থেকেই তার অনুসারীরা বিষয়টিকে ‘শুভ ইঙ্গিত’ বলে প্রচার শুরু করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে নিজ দলের প্রার্থীকে রেখে হুছাম উদ্দিনের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় নামেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নৌকার প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও হুছাম উদ্দিনকে জিতিয়ে আনতে সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের তৎপরতা ছিল। এমনকি তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও নামেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান আতিকী বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলালের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডাব প্রতীকে ১১৭৫ ভোট পেয়েছেন।

কুষ্টিয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী পেয়েছেন ১ হাজার ২০৩ ভোট।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী দল হচ্ছে ১১টি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের অংশ নেওয়ায় আপত্তি ছিল তাদের।

news24bd.tv/তৌহিদ