ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে রাত যাপন করতেন মুক্তা

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে পঞ্চগড়-১ আসনে নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান মুক্তা। ছবি: নিউজ২৪

ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে রাত যাপন করতেন মুক্তা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বিপুল ভোটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন নাঈমুজ্জামান মুক্তা। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশের পরপরই বাজিমাত করেছেন তিনি। মানুষের ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে ব্যক্তিগত ইমেজ তৈরী করেছিলেন এই তরুণ নেতা।

ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে রাত কাটানো, তরুণ তরুণীদের সাথে সাইকেল চালানো, খেত খামারে বসে চাষিদের সাথে খাওয়া দাওয়া করা, স্কুলে স্কুলে বঙ্গবন্ধুর বই পড়া উৎসবসহ নানা ধরনের আকর্ষনীয় কার্যক্রম তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও তার জনপ্রিয়তার কাছে হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী।

বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন মুক্তা। তবে বড় কঠিন ছিলো এই পথ। জানা যায়, ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন নাঈমুজ্জামান মুক্তা।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরী করতেন তিনি। শিক্ষা জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে কাজ করার সময়ই পঞ্চগড়ের উন্নয়নে তার কর্মচঞ্চল ভূমিকা তাকে আস্তে আস্তে পরিচিতি এনে দেয়। এরপর তার উদ্যোগে স্কুলে স্কুলে বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনী পাঠের কার্যক্রম শুরু হয়।

তিনি পঞ্চগড়ে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন। এসব অনুষ্ঠানে দেশ বরেণ্য গুণিজন হাজির হতেন। ২০১৭ সালে জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক মোড়ের মুক্তমঞ্চে পঞ্চগড়ের উন্নয়নে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তিনি। স্থানীয় ভাষায় ‘ হামার পঞ্চগড় হামরা গড়িমো’ শিরোনামের এই পরিকল্পনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়।

এই অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ আরও বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যাক্তি উপস্থিত ছিলেন।

এসব কর্মকান্ডের পাশাপাশি তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন। বিভিন্ন গ্রামীণ মানুষের বাড়ির উঠোনে বসে বসে ভাত খেতেন, পিঠা খেতেন। কখনো কখনো তাদের বাড়িতেই রাত যাপন করতেন তিনি।

জানা গেছে, প্রায় অর্ধ শতাধিক ভোটারের বাড়িতে রাত যাপন করেছেন তিনি। এসব কার্যক্রমকে অনেকেই ভালো ভাবে না নিলেও সাধারণ মানুষের কাছে আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন মুক্তা। নিজের দলেরই লোকজন তাকে ঠাট্টা উপহাস করেছে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন নাঈমুজ্জামান মুক্তা । কিন্তু দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগে তার কোন পদ না থাকায় কোন কার্যক্রমেই ডাকা হতোনা তাঁকে। কিন্তু একান্ত নিজের উদ্যোগেই তিনি মাঠে মাঠে নানা রকম পথসভা, মিছিল, মিটিং করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। এসব আয়োজনে কোথাও কোথাও বাধার সম্মুক্ষিন হয়েছেন। নিজ দলের লোকজনের হাতে মারও খেয়েছেন। মামলাও করতে হয়েছে তাকে।

২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সমেম্মলনে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ধরনের কর্মসূচী আয়োজন করতে থাকেন। সর্বশেষ মাস ব্যাপি বিজয় উৎসব আয়োজন করেন তিনি। এই আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের আলোচনা ছাড়া হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতির নানা অনুসঙ্গ উপস্থাপিত হয়। এসব আয়োজনে জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন না। হাতে গোনা কয়েকজন নেতাই তাকে সঙ্গ দিয়েছেন। কিছু গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন এসব আয়োজনে।

মনোনয়নের আগেই তিনি পঞ্চগড়-১ আসনের তিন উপজেলায় বিশাল জনসভা আয়োজন করেন। এসব কাজে সবসময় ছায়ার মতো উৎসাহ দিয়েছেন সহধর্মীনী মেজর (অব:) কাজী মৌসুমী। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাদের দুজনকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসন থেকে ৬ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় নাঈমুজ্জামান মুক্তাকে। এছাড়া মনোনয়ন কেনেন বাকি ৫ জন। বাকিরা সবাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থীতা ঘোষণা দেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট। ফলে নির্বাচনে চ্যালেঞ্জে পড়েন মুক্তা।

নির্বাচনকালীন প্রচারণাতেও ব্যাতিক্রম আয়োজনে আলোচিত হয়েছেন মুক্তা। সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়াম মাঠে ব্যান্ড শো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইস্তেহার ঘোষণা, মুক্ত মঞ্চে তরুণদের সাথে সংলাপ, নারীদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা তাকে সাধারন মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসে।

গত ৭ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভুইঞা মুক্তা- ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাট পেয়েছেন ৫৭ হাজার ২১০ ভোট।

নাঈমুজ্জামান মুক্তা জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর লালনের মানুষ ভজনের দর্শনকে ধারণ করেই আমি রাজনীতি করি। এই দুই চেতনাকে নিয়েই কাজ করেছি। তাই মানুষের কাছাকাছি আসতে পেরেছি বলেই এই বিজয়। স্মার্ট পঞ্চগড় গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

news24bd.tv/DHL