প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর নতুনরা যা বললেন

ছবিতে সাঈদ খোকন, ফেরদৌস, সাকিব, ও সুমন

প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর নতুনরা যা বললেন

অনলাইন ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হতে যাচ্ছেন প্রায় ১শ’ নতুন মুখ। ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে নতুন যারা জিতেছেন তাদের বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। নৌকার হয়েও জাতীয় সংসদে প্রথমবার বসতে যাচ্ছেন নতুন অনেক সদস্য। এছাড়া ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৯ জনই নতুন সদস্য।

এছাড়া ঢাকায় ৯জন, চট্টগ্রামে ৭ জন আর কুমিল্লায় নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন ৬ জন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেকে। কেউবা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন।  কেউবা নিজ জনভিত্তির ওপর ভরসা করেই লড়েছেন।
 
আজ বুধবার ( ১০ জানুয়ারি)দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো নতুন সংসদ সদস্য সবাই শপথ গ্রহণ করেছেন। অনেকে প্রথম সংসদ সদস্য হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন । এ নিয়ে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট:
এক, হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসন থেকে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বুধবার ( ১০ জানুয়ারি) সংসদে শপথ গ্রহণ শেষে বলেছেন,‘ আমি সংসদ সদস্য হওয়াকে আলাদাভাবে নিচ্ছি না। এটা একদমই যায় না। এটা পাঁচ বছরের জন্য। আমি খারাপ করলে লোকজন আমাকে আবার বিদায় করে দেবে। আমি ভালো করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চাই ‘ ’

দুই, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, 'প্রথমবারের মতো এমপি হলে ভালই লাগে, প্রথমবার পিতার হওয়ার মতো। '

তিন, মাগুরা-১ আসন থেকে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি ওয়ান ডে কিংবা টি-টোয়েন্টির মতো নয়, এটা টেস্ট ম্যাচের মতো খেলতে হবে ।  
চার, ফরিদপুর-৩ (সদর)  সংসদে বিরোধী দলের বিষয়ে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই একত্রে থাকব, এ রকম একটা প্রিলিমিনারি (প্রাথমিক) আলোচনা হয়েছে। সেরকম কংক্রিট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ’ এ কে আজাদ বলেন, তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। যেহেতু আমরা মোস্ট অব দেম উই আর ফ্রম আওয়ামী লীগ (অধিকাংশই এসেছি আওয়ামী লীগ থেকে)।

শপথ অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ কে আজাদ বলেন, তিনি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করবেন। কর্মসংস্থান তৈরিতেও তিনি কাজ করতে চান।
পাঁচ , ঢাকা-১০ এ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস আহমেদ বিজয়ী হয়েছেন। তিনি সকালে  বলেন, ‘আমার ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা দল, ভোটারসহ এলাকাবাসী রেখেছেন, তার প্রতিদান যেন দিতে পারি।
ছয়, ঢাকা-৪ আসনে নৌকার সানজিদা খানমকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েছেন আওলাদ হোসেন।  

সাত, ঢাকা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা। তিনি বলেন, যারা রায় দিয়ে এতোদুর এনেছেন তাদের পাশে থাকব।  

আট, ঢাকা-১৯ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমানকে হারিয়ে বেসরকারি ফলাফলে ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন অনেক দায়িত্ব। সেটা পালন করতে দোয়া চাই।  
নয়, ঢাকা-৬ এর সাঈদ খোকন বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানুষের পক্ষে কাজ করব।  
দশ, ঢাকা ৭ এর সোলাইমান সেলিম বলেন, ভালো লাগছে। সবার দোয়া চাই।  
এগারো, ঢাকা ১১ এর মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসীর জন্য জীবন সপে দিবো।
বারো, ঢাকা-১৪ এর মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, নতুন স্বপ্ন দেখছি। মানুষের কল্যাণে সবসময় আমাকে পাশে পাওয়া যাবে।
তোরো, ঢাকা-১৮ এর খসরু চৌধুরী   ঢাকা-১৮ আসনে কেটলি প্রতীক পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এবার এমপি হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চাই।   
চৌদ্দ, পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ। পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ জয়ী হয়েছেন। তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সাবেক একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস)। ঈগল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট। আর মঞ্জু পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১ ভোট। তিনি বলেন , এ বিজয়ে ও শপথ গ্রহণের পর আমি আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।  
এ ছাড়াও  ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৯ জনই প্রথম সংসদ সদস্য হয়েছেন। ঢাকার ২০টি আসনের ৯ জন নতুন। চট্টগ্রামে ১১টির মধ্যে ৭ জন, কুমিল্লার ১১টির মধ্যে ৬ জন নতুন সংসদ সদস্য। এই ৩১টি আসন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে দেখা মিলেছে অনেক নতুন মুখের। যাদের বেশিরভাগেরই বয়সেও তরুণ। চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে ৭ টিতেই এবার নতুন মুখ সংসদ সদস্য হয়েছেন। চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে এবার প্রথমবারের মত ভোটের লড়াইয়ে নেমে জয়ী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেল ৮৯ হাজার ৬৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিন ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৯৫ ভোট।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে প্রথমবারের মতো দলের মনোনয়ন পেয়ে সরাসরি প্রার্থী হন সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। এই আসনে ১ লাখ ৬৮৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন সনি। আর তার নিকটতম ফটিকছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবু তৈয়ব পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোট।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে এবারই প্রথমবারের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুন। তিনি সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। নৌকা প্রতীক নিয়ে এস এম আল মামুন ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। সেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির দিদারুল কবির লাঙল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৮৮০ ভোট।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে জয়ী নগর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালামও সংসদ সদস্য হিসেবে নতুন মুখ।
চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলি-ডবলমুরিং) আসনে জয়ী হয়েছেন গত আগস্টে এই আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার সংসদে যাওয়া মহিউদ্দিন বাচ্চু। দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জে পড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাচ্চু ৫৯ হাজার ২৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র মনজুর আলম ফুলকপি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৩৫ ভোট। আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ পেয়েছেন ২০৩৮ ভোট।
চট্টগ্রাম-১২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। পটিয়ায় মোতাহেরুল ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ ভোট পেয়ে বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তিন বারের সংসদ সদস্য সামশুল পান ৩৫ হাজার ২৪০ ভোট।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে অনেকটা চমক দেখিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেব উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে সংসদ সদস্য হবার ভোটে দাঁড়ান। এ আসনে ৮৫ হাজার ৬২৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন মোতালেব। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩৯ হাজার ২৫২ ভোট পেয়েছেন।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ঈগল প্রতীকে, হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরিফ রুয়েল, হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট মো. আবু জাহিরও এই প্রথমবার নির্বাচিত হলেন।
সুনামগঞ্জের দুই আসনে বিজয়ী হয়েছেন নতুন দুই মুখ। বিজয়ীরা হলেন সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার (নৌকা)। এছাড়া সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই-শাল্লা) বিজয়ী হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত (স্বতন্ত্র)।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে বিশাল ব্যাবধানে নৌকার প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম নাদেল, মৌলভীবাজার-৩ ( সদর- রাজনগর) আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী জিল্লুর রহমান। মৌলভীবাজার-৪ ( শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুস শহীদ বিজয়ী হয়েছেন।


news24bd.tv/ডিডি