পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনার মুখে বাংলাদেশকে চীন ও রাশিয়ার আলিঙ্গন

নির্বাচনের পর এক অনুষ্ঠানে বিদেশী কূটনীতিবিদদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনার মুখে বাংলাদেশকে চীন ও রাশিয়ার আলিঙ্গন

অনলাইন ডেস্ক

রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের কয়েক ঘণ্টা পরেই শেখ হাসিনা বিদেশী কূটনীতিবিদদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যেখানে উপস্থিত বিদেশী কূটনীতিবিদেরা শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য শুভেচ্ছা জানান। ভারত, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া এবং চীনসহ আরও অনেক দেশের কূটনীতিবিদেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু, ওয়াশিংটন এবং লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সরকার এই নির্বাচনকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি এবং সকল দল অংশ নেয়নি।

অপরদিকে, নির্বাচনকালীন সহিংসতা এবং ভোটদানে জোর করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিবৃতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের কিছু যায় আসে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা বিশ্বের নিন্দার মুখে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চীন ও রাশিয়ার শুভেচ্ছা বার্তা শেখ হাসিনার এবারের ক্ষমতায় আসাকে কেন্দ্র করে এক পরিবর্তিত বৈদেশিক নীতির দিকে ইঙ্গিত করে। চীন ও রাশিয়ার দিকে বাংলাদেশের ঝুঁকে যাওয়া এবং নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দাকে পাত্তা না দেয়া আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকাভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদুর রহমান জানান, সামনে হয়তো যারা বাংলাদেশের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছনে অবদান রেখেছেন তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।

গত বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তির ওপরে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে। কিন্তু এমনটা করলে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আর পাশে পাবে না যুক্তরাষ্ট্র।  
অপরদিকে, বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র চালু করার ক্ষেত্রে রাশিয়া প্রচুর সাহায্য করেছে। জ্বালানী, খাদ্যপণ্য এবং সার সরবরাহের ক্ষেত্রেও রাশিয়া বাংলাদেশের অনেক বড় সঙ্গী। রহমানের মতে, পশ্চিমা বিশ্ব যদি বাংলাদেশের নতুন সরকারকে বেশি চাপ দেয় তবে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজের মতে, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব প্রচন্ড দ্বন্দ্বে ভুগতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সামনেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৪৭ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি করে, যা দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশ। অতি সম্প্রতি আটজন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য আমেরিকার অ্যা[পারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনকে শ্রম অধিকার এবং যথার্থ মজুরির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিতে অনুরোধ জানান। তাছাড়া, বেতন বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে অনেক গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হয়েছেন, যা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য গভীর সংকটের সৃষ্টি করেছে।

এ ধরণের যেকোনো সংকট বাংলাদেশকে আরও বেশি চীনের দিকে ঠেলে দেবে।

সূত্রঃ আল জাজিরা 

news24bd.tv/ab