দুনিয়া মানুষের চিরস্থায়ী আবাস নয়

দুনিয়া মানুষের চিরস্থায়ী আবাস নয়

 মাইমুনা আক্তার

মানুষ দুনিয়ার সফলতার জন্য কত কিই না করে। অথচ সবাই জানে যে দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়, মানুষও চিরকাল পৃথিবীতে থাকে না। মানুষের স্থায়ী আবাস হলো আখিরাত। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর অবশ্যই যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম।

তবু কি তোমরা বোঝো না?’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১০৯)

আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন ঘোষক (জান্নাতের মধ্যে) ঘোষণা দেবে, এখন থেকে তোমরা জীবিত থাকবে আর কখনো মরবে না। তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমরা অফুরন্ত ভোগবিলাসের ভেতর থাকবে, অভাব-অনটন কখনো তোমাদের স্পর্শ করবে না।

এটাই আল্লাহ তাআলার এই বাণীর তাৎপর্য আর এটাই জান্নাত,  তোমাদের যে জান্নাতের অধিকারী করা হয়েছে। এটা দেওয়া হয়েছে তোমাদের কাজের ফলস্বরূ। ’ [(সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৭২) (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৪৬)]
বোঝা গেল দুনিয়া যেমন ক্ষণস্থায়ী, তার জয়-পরাজয়ও ক্ষণস্থায়ী। আর আখিরাত যেমন চিরস্থায়ী, তার সফলতা-ব্যর্থতাও চিরস্থায়ী।

তাই আমাদের উচিত, আখিরাতের সফলতাকে প্রাধান্য দেওয়া। তাকওয়া অবলম্বন করা, আল্লাহকে ভয় করা, কষ্ট হলেও হালাল পথে থাকার চেষ্টা করা। তবেই আখিরাতের স্থায়ী সফলতা অর্জন করা যাবে।
আখিরাতে মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতি ব্যক্তিও ১০ দুনিয়ার সমান জান্নাত পাবে। সেখানে তাদের ভোগবিলাসের উপকরণের কোনো অভাবই থাকবে না।

থাকবে না কোনো কষ্ট-ক্লেশ, সেখানকার কোনো প্রাচুর্য আবার বিরক্তিকরও হবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্থায়ী জান্নাত, যাতে তারা প্রবেশ করবে, সেখানে তাদের স্বর্ণনির্মিত কঙ্কণ এবং মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে। সেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। তারা বলবে, প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করেছেন; নিশ্চয়ই আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের স্থায়ী আবাসে প্রবেশ করিয়েছেন, যেখানে কোনো ক্লেশ আমাদের স্পর্শ করে না এবং কোনো ক্লান্তিও স্পর্শ করে না। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৩-৩৫)

এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের সর্বদা আখিরাতের জীবন প্রাধান্য দেওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে পরিখা খননের স্থানে উপস্থিত হন। আনসার ও মুহাজিররা একদিন ভোরে তীব্র শীতের মধ্যে পরিখা খনন করছিলেন। তাঁদের কোনো গোলাম বা ক্রীতদাস ছিল না যে তাঁরা তাদের এ কাজে নিয়োগ করবেন। ঠিক এমন সময়ে নবী (সা.) তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হলেন। তাঁদের অনাহার ক্লিষ্টতা ও কষ্ট দেখে তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের সুখ-শান্তিই প্রকৃত সুখ-শান্তি। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। সাহাবিরা এর জবাবে বলেন, আমরা সেসব মানুষ, যারা মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি যত দিন আমরা জীবিত থাকি আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামের জন্য। (বুখারি, হাদিস : ৪০৯৯)

অর্থাৎ আখিরাতের প্রকৃত সুখ-শান্তি পেতে তাঁরা সারা জীবন রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে থেকে যেকোনো কষ্ট সহ্য করার শপথ গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ সবাইকে আখিরাতের সফলতা দান করুন। আমিন।

 

এই রকম আরও টপিক