হাত তুলে আকুতি মিনতি করে মহানবী (সা.)-এর দোয়া

প্রতীকী ছবি

হাত তুলে আকুতি মিনতি করে মহানবী (সা.)-এর দোয়া

 শরিফ আহমাদ

হাত তুলে দোয়া করার সময় বান্দার দাসত্বের পূর্ণরূপ প্রকাশ পায়। মহান আল্লাহ খালি হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। ইকরামা (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি রাসুল (সা.) হাত তুলে দোয়া করতে দেখেছেন। সেই মুনাজাতে তিনি এরূপ দোয়া করেছেন, প্রভু! আমি তো মানুষ।

মানবসুলভ দুর্বলতাবশত আমি যদি কোনো মুমিন বান্দাকে কোনোরূপ কষ্ট দিয়ে থাকি বা গালি দিয়ে থাকি, তবে এ জন্য তুমি আমাকে শাস্তি দিয়ো না। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬১৪)

বৃষ্টির জন্য দোয়া

নবী কারিম (সা.)-এর যুগে এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সে সময় একদিন নবী কারিম (সা.) খুতবা প্রদানকালে জনৈক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন অনাহারে মরছে।

আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন। অতঃপর রাসুল (সা.) দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করেন। সে সময় আকাশে কোনো মেঘ ছিল না। (বর্ণনাকারী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি! তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মতো মেঘের খণ্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তার মিম্বার থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল।
এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তী জুমা পর্যন্ত হতে থাকল। অতঃপর পরবর্তী জুমার দিনে সেই বেদুইন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। ফসল ডুবে যাচ্ছে। অতএব, আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দোয়া করুন। তখন তিনি দুই হাত তুলে বৃষ্টি অন্য এলাকায় হওয়ার জন্য দোয়া করেন। (বুখারি, হাদিস : ১০১৫; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬১৬)

মাগফিরাত কামনার দোয়া

নবী কারিম (সা.) হুনায়ন যুদ্ধ থেকে অবসর হওয়ার পর আবু আমির (রা.)-কে একটি সৈন্যবাহিনীর আমির নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের প্রতি পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ইন্তেকালের  আগে তিনি স্বীয় ভাতিজা আবু মুসা (রা.)-কে আমির নিযুক্ত করেন। তাঁর মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর কাছে সালাম পৌঁছানো এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করেন। আবু মুসা (রা.) যুদ্ধ শেষে রাসুল (সা.)-এর কাছে আবু আমিরের সংবাদ পৌঁছালেন। সব শুনে তিনি পানি আনতে বলেন এবং অজু করেন। তারপর তাঁর দুই হাত ওপরে তুলে তিনি দোয়ায় বলেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা আবু আমিরকে মাগফিরাত দান করো। বর্ণনাকারী বলেন, নবী কারিম দোয়ার মুহূর্তে দুই হাত এত ওপরে তোলেন যে আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ পর্যন্ত দেখতে পেয়েছি। (বুখারি, হাদিস : ৩৯৮৭)

হিদায়াতের জন্য দোয়া

রাসুল (সা.)-কে কাফিররা অনেক কষ্ট দিয়েছে। জুলুম-নির্যাতন করেছে। নীরবে সব কষ্ট সহ্য করেছেন তিনি। প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে শত্রুদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা দাউস গোত্রের তোফায়েল ইবনে আমর রাসুল (সা.)-এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! দাউস গোত্র অবাধ্য ও আল্লাহর দ্বিনকে অস্বীকার করার পথ বেছে নিয়েছে। আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদদোয়া করুন। তখন রাসুল (সা.) কিবলামুখী হলেন এবং দুই হাত তুলে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি দাউস গোত্রকে হিদায়াত দান করো এবং তাদের সঠিক পথে নিয়ে আসো। (বুখারি, হাদিস : ৪৩৯২; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬১৫ )

সূর্য গ্রহণকালে দোয়া

সূর্য গ্রহণকালে যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়ে থাকে তবে নামাজ আদায় করতে হয়। এটাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘সালাতুল কুসুফ’ বলা হয়। আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় একবার আমি আমার তীর-ধনুক অনুশীলন করছিলাম। হঠাৎ সূর্যগ্রহণ দেখা দিল। আমি তীর-ধনুক রেখে দিলাম এবং মনে মনে বললাম, আজ সূর্যগ্রহণকালে রাসুল (সা.)-এর অবস্থান লক্ষ করব। যখন আমি গিয়ে পৌঁছলাম তখন তিনি হাত তুলে দোয়া করছিলেন এবং তাকবির, হামদ ও তাহলিলে মশগুল ছিলেন। তারপর সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেল। রাসুল (সা.) তখন দুটি সুরা পড়লেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৯০)

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে হাত তুলে দোয়া করা সুন্নত। সুতরাং সবার হাত তুলে দোয়া করা উচিত।

 

এই রকম আরও টপিক