প্রতিরোধ করতে হবে ধেয়ে আসা নীরব ঘাতককে

ড. হুমায়ুন কবীর 

প্রতিরোধ করতে হবে ধেয়ে আসা নীরব ঘাতককে

ড. হুমায়ুন কবীর 

ধারণা করা হচ্ছে যে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি লোক মারা যাবে শুধুমাত্র এন্টিবায়োটিক/এন্টিমাইক্রবিয়াল রেজিস্টেন্সের জন্য।  
আমরা কি জানি এন্টিবায়োটিক/এন্টিমাইক্রবিয়াল রেজিস্টেন্স কি? 
আমাদের করণীয় কি? 
আমরা কি প্রস্তুত এই নীরব ঘাতক কে প্রতিরোধ করার জন্য? 
এন্টিবায়োটিক বা এন্টিভাইরাল বা এন্টিফাংগাল ঔষধ যখন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন আমারা তাকে এন্টিবায়োটিক/এন্টিমাইক্রবিয়াল রেজিস্টেন্সে বলি। অর্থাৎ অনুজীব ( ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস অথবা ফাংগাস) যখন তাদের জীনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের মাধ্যমে ঔষধের কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে পারে তখন সেই অনুজীবকে আমরা এন্টিবায়োটিক/এন্টিমাইক্রবিয়াল রেজিস্টেন্ট অনুজীব বলি।  
ব্যাকটেরিয়া অনেক সময় তার সেল ওয়াল (বাহিরের আবরণ) বা প্রোটিনের গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে বা ইফলাক্স পাম্প যা দিয়ে এন্টিবায়োটিকে নিজের কোষ থেকে বের করার মাধ্যমে এন্টিবায়োটিকের কর্মক্ষমতা প্রতিরোধ করে একটি নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্টেন্ট হয়।

এবং এই রেজিস্টেন্স ম্যাকানিজম/ কৌশল পরবর্তি কোষে স্থানান্তর করে বংশ বিস্তার করার সময়।  
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার কেন রেজিস্টেন্স হচ্ছে? 
সহজ কথায় হলো আমাদের দ্বারা এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে। একটি 
উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক, ধরুন আপনার জ্বর হয়েছে আপনি ফার্মেসী থেকে এন্টিবায়োটিক নিয়ে এসে খাওয়া শুরু করলেন। এখন কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে,
১. আপনার জ্বর হয়তো কোনো ব্যাকটেরিয়ার জন্য হয় নাই, হয়তো ভাইরাস এর জন্য হয়েছে।
তখন সেই এন্টিবায়োটিক আপনার শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধংস করবে, ফলে আপনার শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বংশ বিস্তার করবে।  
২. অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে, ব্যাকটেরিয়া টিকে থাকার জন্য জীনগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটাবে।
৩. এন্টিবায়োটিকের কোর্স পূর্ণ না করলে, সব ব্যাকটেরিয়াকে ধংস করা যাবে না, বেঁচে যাওয়া ব্যাকটেরিয়া রেজিস্টেন্স ম্যাকানিজম/ কৌশল সহ বংশ বিস্তার করবে।  
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অনুজীব রেজিস্টেন্স হলে আমাদের সমস্যা কি?
আমাদের সমস্যা হলো সামান্য সংক্রমণ হলে আমরা উপযুক্ত এন্টিবায়োটিকের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাব। অথবা বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের সময় উপযুক্ত

এন্টিবায়োটিকের অভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন হবে।  
আমাদের করণীয় কি? 
ব্যাক্তি পর্যায়ে আমাদের করণীয় হল, 
১ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক না খাওয়া।  
২ উপসর্গ চলে গেলেও এন্টিবায়োটিকের কোর্স পূর্ণ করা ।
৩ অনুমানের উপর এন্টিবায়োটিক সেবন না করা।  
ডাক্তারদের ও সময় এসেছে নতুন ভাবে চিন্তা করার। বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায় ঠান্ডা, জ্বর বা কাশি নিয়ে রোগী আসলেই, কোন প্রকার পরীক্ষা না করেই এন্টিবায়োটিক পেসক্রাইব করা, আমাদের এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। উপযুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করে এন্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা পরীক্ষার করে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক পেসক্রাইব করা উচিত।  
রাষ্ট্রের করণীয়, 
১. উপযুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত না করে এবং এন্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা পরীক্ষার না করে এন্টিবায়োটিক পেসক্রাইব করা যাবে না, এই মর্মে আইন প্রণয়ন করা।  
২. আইন এর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া।
৩. পেসক্রিপসন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রির বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।  
আমি আমাদেরকেই জিজ্ঞেস করতে চাই, 
আমরা কি প্রস্তুত এই নীরব ঘাতক কে প্রতিরোধ করার জন্য?

লেখক: সুইডেনের ক্যারোলিন্সকা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কর্মরত ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।  

news24bd.tv/ডিডি