ভারতে মাদ্রাসায় অর্থায়ন বন্ধ, চাকরি হারাবেন ২১ হাজার মুসলিম শিক্ষক

ভারতের একটি মাদ্রাসা-ফাইল ছবি।

ভারতে মাদ্রাসায় অর্থায়ন বন্ধ, চাকরি হারাবেন ২১ হাজার মুসলিম শিক্ষক

অনলাইন ডেস্ক

ভারতে মোদি সরকার উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ভোট নির্বাচনে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার জন্যে মাদ্রাসা বন্ধ করার প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল। পরে এই নীতি সমালোচিত হওয়ায় এখন মাদ্রাসায় অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ২১ হাজার মুসলিম শিক্ষক পড়েছেন পেশাগত জীবনে বেকায়দায়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সূত্র, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও জিটিভি অনলাইন।  
ভারতে সাধারণ নির্বাচন হবে মে মাসে।  
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন মতে, ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য ২০০৯-১০ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার রাজ্যটিতে 'স্কিম ফর প্রোভাইডিং কোয়ালিটি এডুকেশন ইন মাদ্রাসাজ' নামের একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করেছিল। পরে ২০১৬ সালে সেই প্রকল্পের তহবিলে আরও ৩০০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা) যোগ করেছিল তৎকালীন বিজেপি সরকার।
প্রকল্পটি চালু করার পর থেকে এ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৭০ হাজারেরও বেশি মাদ্রাসা। আসন্ন মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগেই মোদি সরকার মাদ্রাসাগুলোতে এ অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ইফতিখার আহমেদ জাভেদ রয়টার্সকে বলেন, '২১ হাজারেরও বেশি শিক্ষক তাদের চাকরি হারাতে চলেছেন। এতে মুসলিম ছাত্র ও শিক্ষকেরা ৩০ বছর পিছিয়ে যাবে। '
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হুমকি ও হয়রানি করছে।  
রয়টার্সের পর্যালোচনা করা একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের মার্চ মাসে মাদ্রাসাগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত নথি থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত এই কর্মসূচির আওতায় মোদী সরকার রাজ্যগুলোর নতুন কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করেনি।
যদিও মোদি সরকার ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এই কর্মসূচির জন্য রেকর্ড তিন বিলিয়ন রুপি (৩৬ মিলিয়ন ডলার) তহবিল সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তার অফিস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সরকারি প্যানেলের সদস্য শহীদ আখতার বলেন, 'এই কর্মসূচি মুসলিম শিশুদের উপকার করেছে এবং এটি আবার চালু করা উচিত। '
তিনি রয়টার্সকে বলেন, 'এমনকি প্রধানমন্ত্রীও চান শিশুরা ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। এই প্রকল্প যাতে বহাল থাকে, তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলব আমি। '
উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রধান জাভেদের মোদীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের অক্টোবরের পর থেকে থেকে প্রকল্পটির তহবিলে অর্থবরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।  
রাজ্য সরকার এপ্রিল থেকে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে এবং এই মাসে পুরোপুরি বেতন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  
আগে যেখানে মাদ্রাসার একজন জুনিয়র শিক্ষক মূল বেতন পেতেন ১২ হাজার রুপি, বর্তমানে তার বেতন নেমে এসেছে তিন হাজার রুপিতে।  
উল্লেখ্য, ভারতের অনেক মাদ্রাসা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুদান দ্বারা পরিচালিত হয়। আর বাকিরা সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভর করে।

news24bd.tv/ডিডি