নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দুদকের নথি তলব

প্রতীকী ছবি

সিরাজগঞ্জে এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি

নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দুদকের নথি তলব

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

অনাপত্তি প্রত্যয়ন ছাড়া অর্ধশত কোটি টাকা লোপাট ও দরপত্রবিহীন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা অনিয়ম করে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ ওঠেছে সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে দুদকের পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বিভিন্ন নথি তলব করে নোটিশ প্রদান করেছেন।

অন্যদিকে, শাস্তিমূলক বদলী করা হলেও তদবির করে বদলী ঠেকিয়েছেন সফিকুল। অভিযোগ রয়েছে তদন্তে প্রভাব বিস্তার করতেই তিনি বদলী ঠেকিয়েছেন।

এমনকি গতকাল আরেক প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম যোগদান করতে আসলে তিনি যোগদান করতে পারেননি।

দুদকের নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে 'অনাপত্তি প্রত্যয়ন' ছাড়াই ঠিকাদারদের অর্ধশত কোটি টাকার বিল ছাড় ও দরপত্রবিহীন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আগামী ১৮ জানুয়ারীর মধ্যে তাড়াশ-কুন্দইল-বাররুহাস সড়ক সংস্কার, রায়গঞ্জ নিমগাছি-সলঙ্গা সড়ক, কাজীপুর মনসুরনগর ইউনিয়ন-ছালালহাট সড়ক, ৮১ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতু, সোনামুখী-ভানুডাঙ্গা সড়ক ও সোনামুখী-হরিনাথপুর সড়ক নির্মাণ প্রকল্পসমূহের এপিপি, বরাদ্দপত্র, কার্যাদেশ, চুক্তিপত্র, চূড়ান্ত বিল প্রদানের অনাপত্তি  প্রত্যয়নপত্র এবং ঠিকাদারকে বিল প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে।

এছাড়াও নোটিশে তাড়াশ উপজেলার তালম বারুহাস ইউনিয়নের 'ভদ্রাবতী' খাল (উত্তর ও দক্ষিণ) খনন কাজের প্রাক্কলন, বরাদ্দপত্র, এলসিএস (লেবার কন্ট্রাক্টিং সোসাইটি) গ্রুপ কর্তৃক কাজ বাস্তবায়নের প্রাক্কলন, ৩০০ টাকার ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা, সভার কার্যবিবরণীসহ এলসিএস গ্রুপের শ্রমিকদের তালিকা, কার্যাদেশ, মাস্টাররোল, এমবি মেজারমেন্ট বুক, প্রদানকৃত বিলের কপি, লেবার কন্ট্রাক্টিং সোসাইটি (এলসিএস), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকাসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ওভারব্রিজ-রেলঘুন্টি-টু-ভাড়াঙ্গা রাস্তার কার্পেটিং ও হেরিংবন কাজের বরাদ্দপত্র, পত্রিকায় প্রকাশিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পত্রিকা, দরপত্র ওপেনিং কমিটির তালিকা, ওপেনিং কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত দরপত্র প্রাপ্তির তালিকা, মূল্যায়ন কমিটির তালিকা, মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কম্পারেটিভ  স্টেটমেন্ট, কার্যাদেশ, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত বিল ভাউচার এবং ঠিকাদারকে বিল প্রদান সংক্রান্তে যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজের বরাদ্দপত্র, পত্রিকায় প্রকাশিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, দরপত্র ওপেনিং কমিটির তালিকা, ওপেনিং কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত দরপত্র প্রাপ্তির তালিকা, মূল্যায়ন কমিটির তালিকা, মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কম্পারেটিভ স্টেটমেন্ট, কার্যাদেশ, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত বিল ভাউচার, ঠিকাদারকে বিল প্রদান সংক্রান্তে যাবতীয় রেকর্ডপত্র এবং কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দুদকের পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক জানান, সিরাজগঞ্জ এলজিইডির বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম ও তার দপ্তরে বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, পাবনা আঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, গত দু’মাস আগে ১৫ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুলকে পাবনায় বদলী করা হয়। আমাকে সিরাজগঞ্জে বদলী করা হয়। এরপর যোগদান করতে দুইমাসে বেশ কয়েকবার এসেছি। কিন্তু সফিকুল ইসলাম দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। সর্বশেষ রোববার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন।

মনিরুল আরও বলেন, এরপর অ্যাসুউম করে যোগদান করে কপি প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠিয়ে দেই। অতঃপর সফিকুল ইসলাম আমাকে তার পিয়ন মারফত হোয়াটসঅ্যাপে অপর একটি আদেশ ধরিয়ে দেন। তাতে দেখা যায় পূর্বের আদেশটি ছয়দিন পর গত ২১ নভেম্বর রহিত করা হয়েছে। প্রধান প্রকৗশলীর এমন আদেশ আমাকে না দিয়ে এক তরফা শুধু শফিকুলের কাছে সরবরাহ করার উদ্দেশ্য সত্যই রহস্যজনক। প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে যদি এমন নাটকই যদি করা হবে, তাহলেও একই অফিস থেকে আমাকে যোগদান করতে বলাটাও যুক্তিযুক্ত নয়।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, দুদুকের চিঠি পেয়েছি। যেসব ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে সেগুলো জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বদলীর বিষয়ে বলেন, প্রধান প্রকৌশলী বদলী করেছিলেন। আবার তিনিই স্থগিত করেছেন। এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

news24bd.tv/ab