প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের উপর ইলম শিক্ষ করা ফরজ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস, ২২৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস, ৬৭৪৬)
দৈনন্দিন জীবনে একজন মুসলিমের ওপর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ধর্মীয় যে আদেশ নিষেধ আছে তা পালনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্বীনি ইলম বা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান।
একে ফরজে আইন বলা হয়।ব্যক্তি জীবনে চলাফেরার জন্য হালাল, হারাম সম্পর্কিত জ্ঞান, ইবাদত পালনের নিয়ম জানা জরুরি। এক্ষেত্রে ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বিষয়, অর্থাৎ, কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান থাকা ফরজ।
যেমন, প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া ফরজ, তাই নামাজ সম্পর্কিত যাবতীয় মাসআলা (অজু করা, তায়াম্মুম করা, অজু ভাঙা) নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য তিলাওয়াত, নামাজের কোন তাসবিহ, কোন দোয় কোন সময় পড়তে হয় তা ঠিকমতো জানা জরুরি।
রমজানে রোজা সম্পর্কিত মাসায়েল জানা জরুরি। অর্থাৎ, যাদের ওপর রোজা ফরজ তাদের জন্য রোজার যাবতীয় পালণীয়-বর্জনীয়, রোজা ভঙ্গের কারণ এবং কোন কারণবশত রোজা ভেঙ্গে গেলে তার কাজা-কাফফারার বিধান, ইত্যাদি বিষয় জানা ফরজ।
জাকাতের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় জ্ঞান থাকা জরুরি। অর্থাৎ, কতটুকু সম্পদ থাকলে জাকাত ওয়াজিব হয়, এ সম্পদ থেকে কত পারসেন্ট জাকাত দিতে হবে। কোন খাতে জাকাত দেওয়া যাবে, কোন খাতে জাকাতের টাকা খরচ করলেও জাকাত আদায় হবে না ইত্যাদি।
একইভাবে কতটুকু পরিমাণ সম্পদ থাকলে হজ ফরজ হবে তা জানা ফরজ। একইসঙ্গে হজের মাসআলা জানতে হবে, হজ পালন কীভাবে বিশুদ্ধ হবে, হজের সময় কী কী কাজ করা যাবে, কী কী কাজ করা যাবে না- এই সম্পর্কিত ধর্মীয় জ্ঞান জানতে হবে।
এইসবের পাশাপাশি কোরবানির মাসআলা জানতে হবে। কেউ ব্যবসায়ী হলে তার জন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে হালাল-হারাম বাছাই করে চলার মাসআলা। চাকরি-বাকরি, মানুষের সঙ্গে লেনদেন, চলাফেরা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান থাকা জরুরি।
কোনো ব্যক্তি বিয়ে করতে চাইলে তার জন্য বিবাহ সংক্রান্ত বিধান জানাও ফরজ। একইভাবে হারাম,কুফরি ও ঈমান-আকিদার ক্ষেত্রে কী ধরনের কথাবার্তা বললে আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে শিরক করা হবে বা তার শানে বেয়াদবি হবে- এই সম্পর্কিত জ্ঞান থাকাও জরুরি।
এ বিষয়ে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেন, আমার জীবনের কসম! হারাম ও কুফরি বাক্য সম্পর্কিত ইলম (জ্ঞান) বর্তমান সময়ে জানা সব থেকে বেশি জরুরি। কারণ, অধিকাংশ সাধারণ মানুষ কুফরি কথা বলে নিজের অজান্তেই। এ কারণেই অজ্ঞ লোকদের জন্য প্রতিদিন তার ঈমানকে নবায়ন করা উচিত... (শামী-১/১২৬)
একজন মুসলিমের জন্য কী পরিমাণ ধর্মীয় জ্ঞান থাকা ফরজ, এই বিষয়ে ইমাম গাজালী রহ. বলেছেন, একজন মুসলিমের জন্য তিন প্রকার ইলম শিক্ষা করা ফরজ। তাহলো- ১.ইলমুত তাওহীদ। ২. ইলমুসি সির। ৩, ইলমুশ শরীয়াহ।
এতটকু জ্ঞান রাখা তওহীদ সম্পর্কে যা দ্বীনের মূলের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এ জ্ঞান রাখা যে, তিনি জীবিত, সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, তার কোন শরীক নেই, সকল গুণে গুণান্বিত, মাখলুকের সিফাত থেকে পবিত্র। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা এবং রাসূল। আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনূত, তিনি ওহীর ব্যাপারে সত্যবাদী ইত্যাদি।
ইলমুস সির বলতে, অন্তরকে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে পবিত্র করা এবং কাম্য বস্তু দিয়ে ভরপুর করা। ইখলাস, নিয়ত, আমলের হিফাযত ইত্যাদি।
আর ইলমুশ শরীয়ত বলতে উদ্দেশ্য হল, ব্যক্তির জন্য যা কিছু আদায় করা ফরজ সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। (মিনহাজুল আবেদীন ইলা জান্নাতি রাব্বিল আলামীন, ইমাম গাযালীকৃত-৪৮-৪৯)
news24bd.tv/DHL