সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় হচ্ছে ১২ উঁচু টিলা

সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় হচ্ছে ১২ উঁচু টিলা

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষায় নির্মাণ করা হচ্ছে উঁচু ১০টি মাটির টিলা। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট সুন্দরবনে বাঘের আধিক্য থাকা পূর্ব বিভাগের কটকা, কচিখালী, কোকিলমুনি, সুপতি, টিয়ারচর, দুধমুখী ও পশ্চিম বিভাগের মান্দারাড়িয়া, নোটাবেকী, পুষ্পাকাটি, নীলকমল, পাটকোস্ট ও ভোমরখালীতে এই ১২টি উঁচু মাটির টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে।

এসব টিলার পাশেই খনন করা হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের জন্য সুপেয় মিঠা পানির ১২টি পুকুরও। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব মাটির টিলা নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে বাঘ-হরিণসহ সব বন্যপ্রাণী।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হবার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ছে সুন্দরবন। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষা জরুরি হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এই ১২টি উঁচু মাটির টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। সুন্দরবনের শরণখোলা, চাঁদপাই, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের আধিক্য থাকা ১২টি স্থানে উঁচু মাটির টিলা নির্মাণের পাশাপাশি স্থানে খনন করা হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের জন্য সুপেয় মিঠা পানির ১২টি পুকুর।

আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব মাটির টিলা নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে বাঘ হরিণসহ সব বন্যপ্রাণী। দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি বাঘ সব সময় উঁচু স্থান পছন্দ করে। বিশেষ করে প্রজননের সময়ে বাঘ দম্পতির শুষ্ক ও উঁচু স্থানের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া মা বাঘ কখনো শাবকের কাছ থেকে দূরে যেতে চায় না।

টিলা নির্মিত হলে বাঘের প্রজননের সুবিধা অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে প্রজনন স্থানের পাশেই তাদের সুপেয় মিঠা পানি পান করতে পারবে। সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ ও শিকার করা প্রাণীর জরিপের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, শিকার করা প্রাণী ও খাল জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ চলছে। আগামী জুলাই মাসে বাঘ ও শিকার করা প্রাণীর জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যে ১২টি উঁচু মাটির টিলা ও ১২টি পুকুর খননের পাশাপাশি বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বন থেকে লোকালয়ে যাতে বন্যপ্রাণী যেতে না পারে সেজন্য ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেড়া, দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো, জিপিএস স্থাপন, খাল জরিপ, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান ও ক্যামেরা কেনা হবে।

এছাড়াও এই প্রকল্পে বাঘসহ বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক কেনা ও প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে তা ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হবে।

সুন্দরবনে বাঘ আরও বাড়ছে এমন সুসংবাদ দিকে ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন আরও জানান, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতিতে বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ১০৬টি। ২০১৮ সালে একই পদ্ধতির জরিপে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টিতে। ২০১৫ ও ২০১৮ সালের পৃথক জরিপে সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধি পায় ৮ শতাংশ হারে। আশার কথা হচ্ছে এবার জরিপে সুন্দরবনের গহীনে স্থাপন করা ক্যামেরাগুলোর ৫৫ শতাংশে বাঘের ছবি পাওয়া গেছে।

news24bd.tv/তৌহিদ